General Knowledge

জৈন দর্শনে আত্মা বা জীব বলতে কী বুঝায়?

অথবা, জীব বা আত্মার স্বরূপ আলোচনা কর।
অথবা, জীব বা আত্মা সম্পর্কিত জৈন দার্শনিকদের মতবাদ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, জৈন দার্শনিকরা জীব বা আত্মার স্বরূপের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
জৈন দার্শনিকদের মতে, জগতের প্রত্যেক বস্তুই অনেকান্ত অর্থাৎ তাদের অনেক দিক রয়েছে। একই বস্তু বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিভিন্ন রকম মনে হয়। জৈন দর্শনের অন্যতম আলোচ্যবিষয় হলো নীতিশাস্ত্র । আর নীতিশাস্ত্র আলোচনা করতে গিয়ে জৈন দার্শনিকরা জীবের বন্ধন এবং সে বন্ধন থেকে কিভাবে মুক্তিলাভ করা যায় তা আলোচনা করেন। জীব বা আত্মার বন্ধন ও মুক্তির আলোচনাতে প্রসঙ্গক্রমে তারা জীব বা আত্মার স্বরূপের বর্ণনা দিয়েছেন ।
১. জীব চেতনাসম্পন্ন : জগতে নানা ধরনের দ্রব্য বা জড় পদার্থ রয়েছে। এসব জড় পদার্থ যে পরমানুর সমন্বয়ে গঠিত সেগুলো নানাবিধ গুণসম্পন্ন। এগুলোর অধিকাংশই অচেতন আবার কিছু চেতন গুণসম্পন্ন। চেতন গুণসম্পন্ন এসব দ্রব্যকে জৈন দার্শনিকগণ জীব বা আত্মা বলেছেন।
২. জীব বা আত্মা পূর্ণ : জৈন দার্শনিকদের মতে, চেতন গুণসম্পন্ন জীব স্বভাবের দিক থেকে পরিপূর্ণ ধরনের। এ গুণের কারণে জীব অনন্ত ও অসীম। জীবসীমাহীন জ্ঞান অফুরন্ত শক্তির অধিকারী |
৩. জীবদেহের প্রধান বাধা : জৈন দার্শনিকরা মনে করেন, জীব যেসব ঐশ্বর্যের অধিকারী সেগুলো বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে বা অপ্রকাশিত হয়ে থাকে। জৈন মতে, জীবের পূর্ণতা লাভের প্রধান বাধা হলো পুদগল সৃষ্ট দেহ।
৪. জীবের গঠন : জৈন মতে, পূর্বজন্মের কর্মফল ভোগ করার জন্য জীব পুনরায় জগতে জন্মগ্রহণ করে এবং তাদের দেহ গঠিত হয় কর্মোপযোগী পুদগল পরমাণুর দ্বারা। জীবের কামনা-বাসনা বিভিন্ন প্রকার হওয়ার কারণে বিভিন্ন দেহ বিভিন্ন রকমের পুদগল পরমাণুর দ্বারা সৃষ্ট হয়।
জীব বা আত্মা জীবদেহে পরিব্যাপ্ত : জৈন দার্শনিকদের মতে, জীব বা আত্মা জীবদেহে পরিব্যাপ্ত থাকে। আর তাই দেহ গঠনকারী পুদগল পরমাণুর প্রলেপ তার উপর পড়ে। ফলে আত্মার অন্তর্নিহিত পূর্ণতা ঢাকা পড়ে।
৬. জীব বা আত্মার ভাব : জৈনগণ জীব’ বা আত্মার মোট চারটি ভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো :
ক্রোধ, মান, মায়া এবং লোভ। এ ভাবগুলোকে জৈনরা কষায় বলেছেন। জৈনদের মতে, এ ভাবগুলোই আত্মার বন্ধনের প্রধান কারণ।
৭. জীব বা আত্মার বন্ধন : জৈন দার্শনিকগণ জীব বা আত্মার দুই ধরনের বন্ধনের কথা বলেছেন। এগুলো হলো- ভাববন্ধ ও দ্রব্যবন্ধ। আত্মাস্থিত কু ভাবনার দ্বারা যে বন্ধনের সৃষ্টি হয় তাকে বলে ভাববন্ধ আর এ কু ভাবনার ফলে পুদগলের দ্বারা দেহের সাথে আত্মার সংযুক্তি রূপ বন্ধনকে বলা হয় দ্রব্যবন্ধ।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, জীব বা আত্মা সম্পর্কিত জৈন মতের নানাবিধ ত্রুটি-বিচ্যুতিপরিলক্ষিত হলেও জৈন দার্শনিকদের মতের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। তারা জীবদেহের পূর্ণতা লাভের প্রক্রিয়া এবং এক্ষেত্রে সম্ভাব্য বাধা এবং বাধা দূরীকরণের উপায় সম্পর্কিত যে পথনির্দেশ করেছেন তা দর্শনের ইতিহাসে অনন্য চিন্তার সাক্ষ্য বহন করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!