General Knowledge

জৈন দর্শনের মৌলিক ধারণাসমূহ কী কী?

অথবা, জৈন দার্শনিকগণ যেসব মৌলিক তত্ত্বের কথা বলেছেন সেগুলো উল্লেখ কর।
অথবা, জৈন দর্শনের মৌলিক প্রত্যয়সমূহ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
দর্শনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, জৈন দর্শন একটি প্রাচীন দর্শন। জৈন দর্শনের আবির্ভাব হয় প্রাগৈতিহাসিক যুগে। চব্বিশজন তীর্থঙ্কর জৈন দর্শনের প্রচারক। মহাবীরকে জৈন ধর্ম ও দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। জৈনগণ নিরীশ্বরবাদী ও বস্তুবাদী। জৈনগণ দর্শনের যেসব সমস্যাবলি নিয়ে আলোচনা করেছেন তার মধ্যে কতকগুলো মৌলিক ধারণা রয়েছে।
নিম্নে প্রশ্নানুসারে এসব মৌলিক ধারণাগুলো পর্যালোচনা করা হলো :
১. স্যাদবাদ : ‘স্যাৎ’ শব্দের অর্থ হলো সম্ভবত। জৈনরা মনে করেন, প্রতিটি অবধারণকে প্রকাশ করার সময় ‘স্যাৎ’ এই বিশেষণটি যোগ করে দেওয়া উচিত। প্রতিটি অবধারণে যদি ‘স্যাৎ’ শব্দটি থাকে তবে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, অবধারণটি আংশিক সত্য এবং আলোচ্য বস্তু সম্পর্কে বিকল্প অবধারণও সত্য হতে পারে। জৈনদের এই মতবাদের নাম হচ্ছে স্যাদবাদ।
২. সপ্তভঙ্গি নয় : যুক্তিবিদ্যায় ‘নয়’ বা অবধারণকে দুই ভাগে ভাগ কার হয়। যথা : সদর্থক এবং নঞর্থক। কিন্তু জৈনগণ সাত প্রকার ‘নয়’ এর প্রত্যেকটিই যে আংশিক সত্য তা প্রমাণ করার জন্য জৈনগণ প্রত্যেকটি ‘নয়’ এর প্রারম্ভে ‘নয়’ এর সমষ্টিকে জৈনগণ সপ্তভঙ্গি নয় নামে অভিহিত করেছেন।
৩. অনেকান্তবাদ : জৈন মতে, মানুষের জ্ঞাত বস্তুমাত্রেরই অনন্ত ধর্ম রয়েছে। এই ধর্মগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : ভাবাত্মক ও অভাবাত্মক। যেসব ধর্মের দ্বারা বস্তু, গঠিত হয় সেগুলোকে ভাবাত্মক ধর্ম বলে। আর যেসব ধর্ম বস্তুতে নাই অর্থাৎ যেসব ধর্মের অনুপস্থিতির জন্য বস্তুটি জগতের অন্যান্য বস্তু হতে ভিন্ন তাদের অভাবাত্মক ধর্ম বলা হয়। বস্তুর এই অসংখ্য ধর্ম সম্পর্কিত জৈন মতবাদকে বলা হয় অনেকান্তবাদ।
৪. নিরীশ্বরবাদ : জৈনধর্ম নিরীশ্বরবাদী। জৈনরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না। তাদের মতে, ঈশ্বরের সত্তা প্রত্যক্ষ, অনুমান, শব্দ এগুলোর কোনকিছু দ্বারাই প্রমাণ করা যায় না। জগৎকে ব্যাখ্যা করার জন্যও ঈশ্বরের অস্তিত্ব কল্পনা করার কোন প্রয়োজন নেই । এভাবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করে তারা নিরীশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
৫. জ্ঞানতত্ত্ব : জৈন মতে, পদার্থের যথাযথ ধারণাই জ্ঞান। যে বস্তু বাস্তবে যা তাকে সে বস্তু বলে জানাকেই জ্ঞান বলা হয়। যে ধারণায় কোন প্রকারের সন্দেহ থাকে সে ধারণাকে যথার্থ জ্ঞান বলা যায় না। যথার্থ জ্ঞানে কোন রকম সন্দেহ থাকতে পারে না। যথার্থ জ্ঞান মানুষের উদ্দেশ্য সাধনে সাহায্য করে। জৈনগণ বলেন, জ্ঞাত বস্তুর সাথে জ্ঞাতার যখন সঠিক
পরিচয় ঘটে তখনই জ্ঞানের উৎপত্তি হয়।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, জৈন দার্শনিকগণ তাদের দার্শনিক চিন্তাচেতনা প্রকাশ করতে গিয়ে যেসব মৌলিক ধারণার অবতারণা করেছেন তা দর্শনের অমূল্য সম্পদ। তাদের এসব মতবাদের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও দার্শনিক জ্ঞানের খাতিরে এগুলোর গুরুত্ব অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!