জগৎ সম্পর্কে চার্বাকদের ধারণা লেখ।
অথবা, চার্বাকরা জগৎ সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করেন?
অথবা, জগৎ সম্পর্কে চার্বাকরা কী বলেন?
উত্তর৷ ভূমিকা : অতীন্দ্রিয় জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করে যে বিদ্যা তাকে অধিবিদ্যা’ বলে। কারণ এটি পরমসত্তার স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করে। পরমসত্তা যেহেতু অতীন্দ্রিয় জগতে বিদ্যমান তাই পরমসত্তার জ্ঞান অসম্ভব। তাদের মতে, যাকে প্রত্যক্ষ করা যায় তাই যথার্থ জ্ঞান। চার্বাকরা জগতের যথার্থতা আলোচনার মাধ্যমে অধিবিদ্যার অসম্ভাব্যতাকে প্রকাশ করেছেন।
জগৎ : চার্বাকরা জগতের অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেছেন, জগৎ যে অস্তিত্বশীল তা প্রত্যক্ষের মাধ্যমে জানা যায়। চার্বাকরা বলেছেন, ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ এ চারটি ভূতের সংমিশ্রণে জগৎ গঠিত। অন্যান্য ভারতীয় দার্শনিকরা Ether বা Akasa নামক আরো একটি উপাদানের কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু এটাকে যেহেতু প্রত্যক্ষ করা যায় না; তাই চার্বাকরা এটিকে বাদ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ এ চারিভূতের সংমিশ্রণের ফলে বা সংযোগের ফলে যাবতীয় বস্তু এমনকি মানবদেহ সৃষ্টি হয়েছে এবং এ চারিভূতের বিয়োগের ফলে তারা বিনষ্ট হয়। চার্বাকরা বলেছেন, এ চতুর্ভূত উপাদান নিজেদের স্বাভাবিক ধর্ম ও ক্রিয়া অনুসারে, পরস্পরের সাথে মিলিত হয়েছে জগৎ সৃষ্টি করেছে। তাই চার্বাক মতবাদকে স্বভাববাদও বলা হয়। চার্বাক মতে, যে চতুর্ভূতের দ্বারা জগৎ সৃষ্টি হয়েছে সে চতুর্ভূত নিত্য এবং অবিনাশী। এদের রূপান্তর হয় কিন্তু ক্ষয় হয় না। চার্বাকদের এ মতবাদের সাথে বিজ্ঞানের শক্তিতত্ত্বের মিল লক্ষ্য করা যায়। চার্বাকগণ কোন কার্যকারণ সম্পর্কে বিশ্বাস করেন না। তারা বলেছেন, কোন ঘটনা অপর ঘটনার সৃষ্টি করতে পারে না। জগতে যা কিছু ঘটে তা আকস্মিকভাবেই ঘটে। যেমন- মিষ্টির মিষ্টত্ব, নিমের তিক্ততা, ফুলের গন্ধ এগুলোর পিছনে কোন কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। এগুলো স্বাভাবিক ঘটে এবং এগুলো ঘটে আকস্মিকভাবে তেমনি জগৎ ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ এ চতুর্ভূতের আকস্মিক সংমিশ্রণের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। এ জগৎ সৃষ্টির পিছনে কোন অলৌকিক শক্তি নেই। এভাবে
জগৎ সৃষ্টির পিছনে কোন অলৌকিক শক্তি বা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করায় চার্বাকরা অধিবিদ্যা থেকে দূরে সরে এসেছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, চার্বাক দর্শন সম্পর্কে কোন প্রামাণিক গ্রন্থ পাওয়া যায় নি। তবুও দর্শন যে অতি প্রাচীন তাতে কোন সন্দেহ নেই। চার্বাকদের মতে, অচেতন জড় পদার্থই একমাত্র সত্তা। সুতরাং চার্বাকদের জগৎ সম্পর্কিত আলোচনার গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায়।