জগৎ এর স্বরূপ সম্পর্কে চার্বাক দার্শনিকদের ধারণা কী?
অথবা, জগৎ এর প্রকৃতি সম্পর্কে চার্বাকদের ধারণা কী?
অথবা, চার্বাকদের মতে জগতের স্বরূপ কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : চার্বাক দর্শন বিশুদ্ধ জড়বাদী দর্শন। চার্বাক দর্শনের মতে, অচেতন জড়পদার্থই একমাত্র সত্তা। চার্বাক দর্শন নিছক জড়বাদী বলে এটা আত্মা এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না। চার্বাক দর্শন সম্পর্কে কোন প্রামাণিক গ্রন্থ পাওয়া যায় নি। তবুও এ দর্শন যে অতি প্রাচীন তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ বেদ, রামায়ণ, মহাভারত ও মহাকাব্যে এবং প্রাচীন বৌদ্ধ সাহিত্যের স্থানে স্থানে এ মতবাদের উল্লেখ পাওয়া যায়। জগৎ এর স্বরূপ সম্পর্কে চার্বাক দার্শনিকদের ধারণা : জগৎ এর স্বরূপ সম্পর্কে চার্বাক দার্শনিকদেরধারণা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. চারিভূতের সংমিশ্রণে জগতের সৃষ্টি : চার্বাকগণ প্রত্যক্ষবাদী। তাদের মতে, প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ। এ প্রত্যক্ষের সাহায্যে জড় জগতের অস্তিত্ব অনুভূত হয়। চার্বাকগণ মনে করেন যে, ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ এ চার ভূতের সংমিশ্রণে জগতের সৃষ্টি।
২. চারিভূত নিত্য ও অবিনাশী : চার্বাক দার্শনিকদের মতে, যে চতুর্ভূতের অর্থাৎ ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ দ্বারা জগতের সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো নিত্য ও অবিনাশী।
৩. চারিভূতের স্বাভাবিক ধর্ম ও ক্রিয়া অনুসারে জগতের সৃষ্টি : চার্বাক দার্শনিকদের মতে, ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ এ চতুর্ভূত নিজেদের স্বাভাবিক ধর্ম ও ক্রিয়া অনুসারে পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে জগৎকে সৃষ্টি করেছে। তাই চার্বাক মতবাদকে স্বভাববাদও বলা হয়।
৪. জগতে ঘটমান সবকিছু আকস্মিক : চার্বাকগণ কার্যকারণ সম্পর্কে স্বীকার করেন না। জগতে যা কিছু ঘটে তা আকস্মিকভাবে ঘটে। মিষ্টি বস্তুর মিষ্টতা, নিমের তিক্ততা, পাখির পলক, ফুলের গন্ধ এসবই স্বাভাবিক এবং আকস্মিক ঘটে। ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ প্রভৃতি চারিভূতের আকস্মিক মিলনের ফলে জগতের সৃষ্টি হয়েছে।
৫. চার্বাকগণ জড়বাদী হলে পরমাণুবাদী নন : চার্বাকগণ জড়বাদী কিন্তু পরমাণুবাদী নন। কারণ তাদের মতে, সূক্ষ্ম পরমাণুকে প্রত্যক্ষ করা যায় না। প্রত্যক্ষ করা যায় না বলে আকাশরূপ ভূতের অস্তিত্বও তারা বিশ্বাস করেন না। অর্থাৎ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা যা প্রত্যক্ষ করা যায় না তার অস্তিত্বে চার্বাকগণ বিশ্বাস করেন নি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় দর্শনে চার্বাকদের জগতের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। তারা ছিলেন প্রকৃতিবাদী ও সাহসী দার্শনিক। কেননা সে সময় ব্রাহ্মণরা যা বলতো সবাই তা গ্রহণ করতো। কিন্তু চার্বাকরাই প্রথমে প্রতিবাদ করেন। এভাবেই চার্বাকরা জগৎ এর স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা করেন।