ছয়দফা কর্মসূচি আলোচনা কর।
অথবা, ছয়দফার ধারাগুলো আলোচনা কর।
অথবা, ছয়দফার বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
অথবা, ছয়দফা আন্দোলনের ধারাগুলো লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের ইতিহাসে ছয়দফা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পূর্ববাংলার জনগোষ্ঠীকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ, নিপীড়ন থেকে রক্ষা করতে বাঙালির জননেতা শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ছয়দফা উত্থাপন করেন। পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বিরোধী দলের এক কনভেনশনে এ প্রস্তাব পেশ করেন। ছয়দফা প্রস্তাবকে ‘বাঙালির মুক্তির সনদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
ছয়দফা কর্মসূচি : নিচে ছয়দফা কর্মসূচি আলোচনা করা হলো :
প্রথম দফা : শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রীয় প্রকৃতি : ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি সত্যিকারের ফেডারেশন রূপে গড়ে তুলতে হবে। প্রদেশগুলোকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার হবে সংসদীয় পদ্ধতির।
দ্বিতীয় দফা : কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা : দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত ক্ষমতা থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। অন্যান্য বিষয়ের ক্ষমতা প্রদেশের হাতে ন্যস্ত থাকবে।
তৃতীয় দফা : মুদ্রা ও অর্থসংক্রান্ত ক্ষমতা : পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুটি আলাদা মুদ্রা থাকবে অথবা দুই অংশের জন্য একটি মুদ্রা থাকবে তবে এক অংশের মুদ্রা যেন অন্য অংশে পাচার না হয় সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থ দফা : রাজস্ব, কর ও শুল্ক সংক্রান্ত ক্ষমতা : খাজনা, ট্যাক্স এবং কর ধার্য ও আদায়ের ক্ষমতা আঞ্চলিক সরকারগুলোর হাতে থাকবে। প্রাদেশিক সরকার বৈদেশিক বাণিজ্য সম্পর্কে আলাপ আলোচনা ও চুক্তি করতে পারবে।
পঞ্চম দফা : বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা : বৈদেশিক মুদ্রার উপর প্রাদেশিক সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং আলাদা হিসাব থাকবে। বৈদেশিক সরকারের সাথে প্রাদেশিক সরকার যে কোন ব্যাপারে চুক্তি করতে পারবে।
ষষ্ঠ দফা : আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন : প্রদেশগুলো তাদের নিরাপত্তার জন্য প্যারা মিলিশিয়া বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন করতে পারবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত দফাগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, ছয়দফা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শোষকদের হাত থেকে মুক্তির মাধ্যম। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল।