চার্বাক অধিবিদ্যা সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, চার্বাক তত্ত্ববিদ্যা সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, চার্বাক অধিবিদ্যা বলতে কী বুঝ?
অথবা, চার্বাক অধিবিদ্যা কী?
অথবা, চার্বাক তত্ত্ববিদ্যা কী?
অথবা, চার্বাক তত্ত্ববিদ্যা বলতে কী বুঝ?
উত্তর৷ ভূমিকা : অধিবিদ্যা হলো অতীন্দ্রিয় জগতের জ্ঞান, যা পরমসত্তা সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করে। অর্থাৎ যে সত্তা এ জগতে বিদ্যমান নয়, কেবল অতীন্দ্রিয় জগতে বিদ্যমান সে সত্তা সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করে অধিবিদ্যা। কিন্তু চার্বাকরা বলেছেন, যা প্রত্যক্ষ করা যায় না তার জ্ঞান অসম্ভব। এজন্যই চার্বাকরা বলেছেন, কেবল অভিজ্ঞতার জগতেই জ্ঞান সম্ভব।
চার্বাক অধিবিদ্যা : অতীন্দ্রিয় জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করে যে বিদ্যা তাকে অধিবিদ্যা বলে। সাধারণভাবে একে তত্ত্ববিদ্যাও বলা হয়। কারণ এটা পরমসত্তার স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করে। চার্বাকরা সত্তা সম্পর্কে যেসব মত প্রকাশ করেছেন তা তাদের জ্ঞানতাত্ত্বিক আলোচনা থেকে নিঃসৃত। তারা জগৎ, আত্মা এবং ঈশ্বরের যথার্থতা আলোচনার মাধ্যমে অধিবিদ্যার অসম্ভাব্যতা প্রকাশ করেছেন। যেমন-
জগৎ : চার্বাকরা জগতের অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেছেন, জগৎ যে অস্তিত্বশীল তা প্রত্যক্ষের মাধ্যমে জানা যায়। চার্বাকরা বলেছেন, ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ এ চারটি ভূতের সংমিশ্রণে জগৎ গঠিত। অন্যান্য ভারতীয় দার্শনিকরা Ether বা Akasa নামক আরো একটি উপাদানের কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু এটাকে যেহেতু প্রত্যক্ষ করা যায় না, তাই চার্বাকরা এটিকে বাদ দিয়েছেন।
আত্মা : ভারতীয় এবং পাশ্চাত্য দার্শনিকদের অনেকেই মনে করেন যে, মানবদেহে আত্মা নামক একটি অবিনাশী নিত্য সত্তা রয়েছে, যা দেহ ও মনকে পরিচালিত করে এবং যার প্রধান গুণ হচ্ছে চেতনা। কিন্তু চার্বাকরা এরূপ কোন আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। কেননা তাদের মতে, আত্মাকে প্রত্যক্ষ করা যায় না।
ঈশ্বর : অধিবিদ্যার মূল বিষয় হলো ঈশ্বর। চার্বাকরা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন নি। কারণ ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করা যায় না। অনেকে জগতের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন। কিন্তু চার্বাকরা বলেছেন, জড় উপাদান জগৎকে সৃষ্টি করেছে। এভাবে চার্বাকরা জগতের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতের দার্শনিক চিন্তার ক্ষেত্রে চার্বাক দর্শন এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। চার্বাক দর্শনই অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ভারতীয় দর্শনে স্বাধীন চিন্তাধারার পথকে প্রশস্ত করেছে। সুতরাং ভারতীয় দর্শনে চার্বাক অধিবিদ্যার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।