চার্বাকরা জীবের চরম উদ্দেশ্য বলতে কী বুঝেন?
অথবা, পরম পুরুষার্থ বলতে কী বুঝ?
অথবা, পরম পুরুষার্থ কী?
অথবা, জীবের চরম উদ্দেশ্য সম্পর্কে চার্বাকদের ধারণা কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : চার্বাকগণ বলেন, ইন্দ্রিয় সুখই জীবনের পরম কল্যাণ বা পুরুষার্থ জগতে যত রকমের সুখ আছে, তন্মধ্যে ইন্দ্রিয় সুখই শ্রেষ্ঠ এবং ধ্রুব। তাই তারা বলেন, এ ইন্দ্রিয়সুখই মানবজীবনের চরম লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাই মানুষের উচিত সুখ প্রদানকারী কর্ম সম্পাদন করা এবং দুঃখ প্রদানকারী কর্ম বর্জন করা।
জীবের চরম উদ্দেশ্য বা পরম পুরুষার্থ : জীবের পরম পুরুষার্থ সম্পর্কে ভারতের বিভিন্ন দার্শনিক সম্প্রদায়ের মতবাদগুলো চার্বাকগণ একে একে খণ্ডন করেন। কোন কোন ভারতীয় দার্শনিক স্বর্গপ্রাপ্তিকে মানুষের পরম পুরুষার্থ বা জীবনের চরম লক্ষ্য বলে মনে করেন। চার্বাকগণ বলেন, স্বর্গবাস বা স্বর্গসুখ মানুষের পরম কল্যাণ বা পুরুষার্থ হতে পারে না, কারণ মৃত্যুর পর যেখানে পুনর্জন্ম নাই এবং মৃত্যুতে যখন মানুষের আত্মাসহ সবকিছুরই বিনাশ সাধিত হয়, তখন কে স্বর্গসুখ ভোগ করবে? তদুপরি বেদে যে স্বর্গের উল্লেখ আছে সে স্বৰ্গকে কেহ কোন সময় দেখে নাই। যা কেউ দেখে নাই সে সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না। আর যা কেউ জানে না তার সম্বন্ধে কথা বলা উচিত নয়। ভারতীয় দার্শনিকদের অনেকেই আবার মোক্ষ বা মুক্তিকে মানুষের পরম পুরুষার্থ বলেছেন। এই দার্শনিকদের মতে, মোক্ষলাভে দুঃখের আত্যান্তিক নিবৃত্তি হয়। কেউ কেউ বলেন, শুধু মৃত্যুর পর আত্মা দেহমুক্ত হলেই মোক্ষলাভ হতে পারে। আর কেউ কেউ বলেন, জীবিতাবস্থায় মোক্ষলাভ সম্ভব। কিন্তু চার্বাকগণ এই মতও গ্রহণ করেন নি। তাদের মতে, মোক্ষবাদ উপহাসের বিষয়মাত্র। কারণ যে আত্মা মৃত্যুতে দেহের সঙ্গে বিনষ্ট হয়ে যায়, মৃত্যুর পরে সে আত্মার মোক্ষলাভ কি করে সম্ভব? আর জীবিত অবস্থায়ও মোক্ষলাভ সম্ভব নয়। কারণ জীবিতাবস্থায় দুঃখের নিবৃত্তি কিছুতেই সম্ভব নয়। সুখদুঃখ মিলেই মানুষের জীবন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুখই মানুষের জীবনের পুরুষার্থ বা পরম কল্যাণ। মানুষ যতদিন বেঁচে থাকবে ততোদিন তাকে সুখদুঃখ ভোগ করতেই হবে। দুঃখ ছাড়া সুখের কোন মূল্য নেই। যেমন- অন্ধকার ছাড়া আলোর কোন মূল্য নেই । মাছে কাঁটা আছে বলে যেমন মানুষ মাছ খাওয়া বন্ধ করে না তেমনি সুখের সঙ্গে দুঃখ বিজড়িত বলে সুখ
ভোগের চেষ্টা হতে মানুষের বিরত থাকা উচিত নয়।