চতুর্থ অধ্যায়, বাংলাদেশ দর্শনে বাউলবাদের প্রভাব
ক বিভাগ
বাউল কারা?
উত্তর : বাংলার একশ্রেণির অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, একতারা আশ্রয়ী
ভাববিদ্রোহী গায়ক ও সমন্বয়মূলক মরমি সাধকের নাম বাউল ।
কোন দর্শন ও ধর্মমতকে বাঙালির একান্ত নিজস্ব দর্শন বলা হয়?
উত্তর : বাউল ধর্ম ও দর্শনকে।
বাংলায় বাউল মতের উন্মেষ ঘটে কখন?
উত্তর : বাংলায় বাউল মতের উদ্ভবকাল নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও মোটামুটিভাবে সতেরো শতকের দ্বিতীয় পাদকেই বাউল মতের উদ্ভবকাল বলা হয়।
বাংলায় বাউল মতধারার প্রবর্তক কে?
উত্তর : মুসলমান মাধববিবি ও আউল চাঁদই বাংলায় বাউল মতের প্রবর্তক।
বাউল দর্শনের বীজ কোথায় নিহিত ছিল মনে করা হয়?
উত্তর : প্রাচীন লোকায়ত, আজীবিক, বৌদ্ধ সহজিয়া, গুপ্ত ও সেন যুগের বৈষ্ণব সহজিয়া, সুফিবাদ, গৌড়ীয় বৈষ্ণবনও বৈষ্ণব সহজিয়া ইত্যাদি মতের মধ্যে বাউল দর্শনের বীজ নিহিত ছিল বলে মনে করা হয়।
বাংলায় বাউল মত জনপ্রিয় করে তোলেন কে?
উত্তর : মাধববিবিরি শিষ্য নিত্যানন্দ পুত্র বীরচন্দ্র বা বীরভদ্রই বাউল মত জনপ্রিয় করে তোলেন। তবে উনিশ শতকে লালন ফকিরের সাধনা ও সৃষ্টির মধ্য দিয়েই এর পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে।
বাংলার বাউলরা কোন ধর্ম থেকে আগত?
উত্তর : বাংলার বাউলদের অধিকাংশই নিম্নবর্ণের হিন্দু বা ধর্মান্তরিত মুসলমান।
বাউলদের জীবন দর্শনের প্রকাশ ঘটে কীভাবে?
উত্তর : বাউল সম্প্রদায়ের জীবনদর্শনের প্রকাশ পায় তাদের গানের মাধ্যমে নানা প্রকার রূপক ও অম্ল ইঙ্গিত ব্যঞ্জনার দ্বারা।
বাউল দর্শন কাকে বলে?
উত্তর : বাংলার একশ্রেণির অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, একতারা আশ্রয়ী, ভাববিদ্রোহী গায়ক, স্বাধীন সমন্বয়মূলক মরমি সাধকদের আত্মোপলব্ধিমূলক চিন্তাধারার নাম বাউল দর্শন।
বাউল দর্শন কোন ধরনের দর্শন?
উত্তর : মরমিবাদী দর্শন।
বাউলদের জীবন দর্শনে কয় ধরনের জীবনযাপন পদ্ধতি লক্ষ করা যায়?
উত্তর : দু’ধরনের। যথা : গৃহী ও বিরাগী।
বিরাগী বাউলের জীবনাচার কেমন?
উত্তর : বিরাগী বাউল গান করে বেড়ায় ও ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন বাঁচায়।
গৃহী বাউলের জীবনাচারের স্বরূপ কী?
উত্তর : গৃহী বাউল ঘরসংসার করে, তবে বিষয়ের (ধন-সম্পদ ইত্যাদি) প্রতি অনাসক্তি তাদের জীবনযাপনের একটি মূল বৈশিষ্ট্য ।
বাউল ধর্ম ও দর্শনের লোকদের অসাম্প্রদায়িক বলা হয় কেন?
উত্তর : মানুষে মানুষে ভেদাভেদ জ্ঞান করা বাউল ধর্ম মানে না। হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোককেই বাউল সাধক হিসেবে দেখতে পাওয়া যায়। বাউল গানের নিম্নোক্ত পংক্তিদ্বয়ে তাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার স্বরূপ সুস্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায়। “নানা বরণ গাভীরে ভাই একই বরণ দুধ জগৎ ভরমিয়া দেখিলাম একই মায়ের পুত।”
বাউলরা কিসের পাগল?
উত্তর : বাউলরা ভবের নয় বরং ভাবের বা প্রেমের পাগল।
বাউলদের সাধনার বিষয় কী?
উত্তর : বাউলদের সাধনার বিষয় হলো প্রকৃতি ও পুরুষের মৈথুনতত্ত্ব।
বাউলদের এই সাধনা কী উপলব্ধির সাধনা?
উত্তর : বাউলদের এ সাধনা হলো প্রকৃতি ও পুরুষের মিলনের মধ্য দিয়ে নিজের আনন্দস্বরূপের উপলব্ধির সাধনা।
বাউলদের সাধন পদ্ধতিতে কোন শক্তি মুখ্য?
উত্তর : নারীশক্তিই মুখ্য।
বাউল সাধনা কীরূপ?
উত্তর : বাউল সাধনা প্রধানত দেহভিত্তিক। তাঁদের মতে, “এই দেহতে কৈলাস, এই দেহতেই হিমালয়, এই দেহতেই বৃন্দাবন, এই দেহতেই গোবর্ধন, এই দেহাভ্যন্তরেই হরগৌরী বা কৃষ্ণরাধিকা নানা নীলা-নাট্য প্রকাশ করেছেন। তাই তারা দেহের সাধনাই করেন।
বাউলরা তাঁদের স্বীয় দেহকে ইচ্ছাধীন করতে সমর্থ হন কিসের মাধ্যমে?
উত্তর : যোগ সাধনার মাধ্যমে বাউলরা তাদের দেহকে ইচ্ছাধীন করতে সমর্থ হন।
বাউল মতে চিররমণাবস্থা বা সচ্চিদানন্দাবস্থা কী?
উত্তর : বাউল মতে, ইচ্ছাধীন অবস্থায় সঞ্চিত শুক্র শরীরে জোয়ারের মতন ইচ্ছানুরূপ প্রবাহমান রেখে রমণসুখ উপভোগ করা যায়, এই অবস্থাই হলো চিররমণানন্দাবস্থা বা সচ্চিদানন্দাবস্থা।
কোন অবস্থায় যথার্থ বাউল হওয়া সম্ভব?
উত্তর : চিররমণানন্দাবস্থা বা সচ্চিদানন্দাবস্থায় উন্নীত হতে পারলেই যথার্থ বাউল হওয়া সম্ভব হয়।
বাউল ধর্মে বা বাউল সাধনায় সর্বোচ্চে স্থান দেয়া হয় কাকে?
উত্তর : বাউল ধর্মে তত্ত্বদর্শন বা জ্ঞান অপেক্ষা কর্মের বা সাধনার গুরুত্ব অত্যধিক বলে এই ধর্মে গুরুকেই সর্বোচ্চে স্থান দেয়া হয়।
গুরু বলতে বাউলরা কাকে বুঝেন?
উত্তর : বাউলরা গুরু বলতে মানব গুরুকেই বুঝেন। যাঁরা সাধনার মাধ্যমে নিজেদের অভিজ্ঞতার দ্বারা আধ্যাত্মিক সত্য লাভ করেন তাঁরাই গুরু।
বাউলরা গুরুকে কয়টি রূপে কল্পনা করেন?
উত্তর : বাউলরা গুরুকে দুই রূপে কল্পনা করেন । যথা : (১)মানুষরূপে এবং (২) মানুষরূপী ঈশ্বররূপে।
বাউল গুরু শিষ্যকে কী শিক্ষা দেন?
উত্তর : বাউল গুরু শিষ্যকে ‘রাগের আচার’ শিক্ষা দেন এবং প্রকৃতি-পুরুষঘটিত যোগসাধনার সময় স্বয়ং উপস্থিত থেকে এই সাধন পদ্ধতির অতি গৃহ্য বিষয়ের উপদেশ দেন।
বাউল দর্শনে পরমাত্মার সন্ধান পাওয়ার উপায় কী?
উত্তর : বাউল মতে, মানবদেহ অতি পবিত্র এবং দেহই পরমাত্মার মন্দির ও মসজিদ। এই দেহের সাধনার মাধ্যমেই পরমাত্মার সন্ধান পাওয়া যায়।
বাউল দর্শনে ঈশ্বরের স্বরূপ কী?
উত্তর : বাউল দর্শনে ঈশ্বর বেদের ঈশ্বর বা অতীন্দ্রিয় ঈশ্বর নন কিংবা মানুষ বহির্ভূত কোনো সত্তা নন। মানুষই সাধনার মাধ্যমে ঈশ্বরত্ব লাভ করে, গুরুরূপে অন্যদের শিষ্যত্ব প্রদান করে সিদ্ধির পথ দেখাতে পারে।
কী প্রকাশ্যভাবে বলা বা প্রকাশ করা বাউলের পক্ষে দূষণীয়?
উত্তর : রাগের আচার, অর্থাৎ বাউল-সম্প্রদায়গত ধর্মের যে ক্রিয়াকালাপ তা প্রকাশ্যভাবে বলা বাউলের পক্ষে দূষণীয়।
বাউলরা কাকে মনের মানুষ বলে অভিহিত করেন?
উত্তর : বাউলরা মানব-দেহস্থিত আত্মাকে মনের মানুষ বলে অভিহিত করেন।
বাউল মতে কীভাবে মনের মানুষের দেখা পাওয়া যায়?
উত্তর : বাউল মতে, দেহের সাধনার মাধ্যমেই মনের মানুষের দেখা পাওয়া যায়।
আলেক-নূর সাঁই বা পরমাত্মার বাস কোথায়?
উত্তর : দেহের মধ্যেই আলেক-নূর সাঁই বা পরমাত্মার বাস।
বাউল দর্শনে স্বীকৃত তত্ত্বসমূহ কী কী?
উত্তর : বাউল দর্শনে স্বীকৃত তত্ত্বসমূহ হলো দেহতত্ত্ব বা ভাব-ব্রহ্মাণ্ডবাদ, গুরুবাদ, মনের মানুষতত্ত্ব, রূপ-স্বরূপতত্ত্ব,প্রকৃতি সাধনাতত্ত্ব, পরমতত্ত্ব, চারচন্দ্রভেদ তত্ত্ব, প্রেমতত্ত্ব ও ধর্মতত্ত্ব।
বাউল দর্শনের দেহতত্ত্ব বা ভাব-ব্রহ্মাণ্ডতত্ত্বের মূল বক্তব্য কী?
উত্তর : এই তত্ত্বের মূল বক্তব্য হলো “যাহা নাই ভাণ্ডে, তাহা নাই ব্রহ্মাণ্ডে; এই ভাণ্ডেই (দেহে) ঈশ্বরের বাস। তাই দেহই বাউল সাধনার প্রাণ বা কেন্দ্রবিন্দু।
দেহের বাইরে স্বর্গের কল্পনাকে বাউলরা কী বলে অভিহিত করেন?
উত্তর : দেহের বাইরে স্বর্গের বা বেহেস্তের কল্পনাকে বাউলরা ‘অনুমান’ বলে অভিহিত করেন যা বাউল দর্শনে স্বীকার করা হয় না।
মনের মানুষ তত্ত্বের মূল বক্তব্য কী?
উত্তর : মনের মানুষ তত্ত্বানুসারে নিজকে চিনলেই মনের মানুষকে চেনা যায়। কেননা নিজের মনের মধ্যে ‘মনের মানুষ’ বা আত্মার অবস্থান। অর্থাৎ মানুষের দেহস্থিত আত্মাই মনের মানুষ।
বাউল দর্শনের রূপ-স্বরূপ তত্ত্বমতে বাউল সাধানার মূল উদ্দেশ্য কী?
উত্তর : রূপের সাধনার মাধ্যমে স্বরূপে উত্তীর্ণ হওয়াই বাউল সাধনার মূল উদ্দেশ্য
বাউল রূপ-স্বরূপতত্ত্বে রূপ ও স্বরূপ বলতে কী বুঝায়?
উত্তর : বাউলদের মতে রূপ বাইরের একটি আকার। এই রূপের মধ্যে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে যে সত্তা বাস করে তাই স্বরূপ।
বাউল মতে কীভাবে স্বরূপপ্রাপ্ত হওয়া যায়?
উত্তর : কোনো আকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে চিরন্তন আকারহীন সত্তার মধ্যে বিলীন হলেই স্বরূপপ্রাপ্ত হওয়া যায়।
স্বরূপ প্রাপ্ত অবস্থাকে বাউল দর্শনে কী বলা হয়?
উত্তর : এই স্বরূপপ্রাপ্ত অবস্থাকে বাউল দর্শনে ‘জ্যান্তে-মরা’ অবস্থা বলা হয়।
বাউল দর্শনে স্বরূপপ্রাপ্তির সাধনা কীরূপ?
উত্তর : নর-নারীর দৈহিক মিলনের মাধ্যমে স্বরূপের সাধনা শুরু হয়ে যখন এ মিলন কামরসোত্তীর্ণ হয়ে যথার্থ প্রেমে রূপ নেয় তখনই স্বরূপের সন্ধান মেলে।
বাউল মতে স্বরূপের বৈশিষ্ট্য বা অংশ কয়টি?
উত্তর : স্বরূপের অংশ তিনটি। যথা :
১. ভোক্তা বা পুরুষ,
২. ভোগ্যা বা প্রকৃতি ও
৩. পুরুষ ও প্রকৃতির সম্মিলনে এক অদ্বয় অবস্থা।
বাউলরা ‘দেহ ছেড়ে ভাবে প্রকাশ করা’ বা ‘মহাভার’ বলতে কী বুঝান?
উত্তর : দেহতত্ত্বভিত্তিক সাধনার মাধ্যমে রূপকে অতিক্রম করে স্বরূপের সন্ধান পাওয়ার মাধ্যমে যে অবস্থা প্রাপ্তি ঘটে তাকেই বাউলরা দেহ ছেড়ে ভাবে প্রবেশ বা মহাভাব বলে অভিহিত করেন।
বাউল দর্শনে সহজ মানুষের স্বরূপ কী?
উত্তর : রজঃকে ‘নীর’ ও শুক্রকে ‘ক্ষীর’ বলে অভিহিত করে বাউলরা ‘রজোবীজ’ বা নীর-ক্ষীর মিলিত সত্তাকে সহজ মানুষের স্বরূপ রূপে আখ্যায়িত করেন।
বাউল মতে পূর্ণভাবে সহজ মানুষের আবির্ভাব হয় কখন?
উত্তর : বাউল মতে, প্রকৃতির সত্তা রজেঃ ও পুরুষের সত্তা বীজে। প্রকৃতির রজঃপ্রবর্তনের ‘তিন দিন’ পরম আত্মা দেহের মস্তক থেকে নেমে আসেন এবং রজোবীজের মিলনে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন। এই ‘তিন দিন’ শেষে পূর্ণভাবে সহজ মানুষের আবির্ভাব হয়।
বাউলদের সাধনার প্রশস্ত সময় কত দিন?
উত্তর : তিন দিন।
বাউল দর্শনে প্রকৃতি সাধনাতত্ত্ব অনুসারে কীভাবে অটল মানুষ ও সহজ মানুষের মিলন ঘটানো সম্ভব?
উত্তর : বাউল মতে, অমাবস্যা-পূর্ণিমার মহাযোগ প্রকৃতির দৈহিক ও মানসিক অবস্থার প্রতি লক্ষ রেখে বিশেষ সময়
যোগে পুরুষ ও প্রকৃতির মিলন সাধন করে ইড়া, পিঙ্গলা, পথত্যাগ করে মধ্যপথ সুষম্না পথে বায়ু চালনা করে মূলধার হতে ক্রমশ ঊর্ধ্বপথে ভূমধ্যে আজ্ঞাচক্রে ‘অটল মানুষ’ ও ‘সহজ মানুষ’ এর মিলন ঘটানো সম্ভব।
হিন্দু বাউলদের মতে বাউল সাধনার মূল ভিত্তি কী?
উত্তর : হিন্দু বাউলদের মতে, দেহের সারসত্তা বা পিতৃধনের নাম বিন্দু বা বীর্য। এই বিন্দু রক্ষাই বাউল সাধনার মূল ভিত্তি।
দেহভিত্তিক বাউল সাধনা কিসের উপর প্রতিষ্ঠিত?
উত্তর : দেহভিত্তিক বাউল সাধনা জ্ঞান-ক্রিয়া, ‘প্রেম-ভাব ও ভক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।
বাউল দর্শনের চারচন্দ্রভেদ তত্ত্বের চারিচন্দ্র কী কী?
উত্তর : চারচন্দ্রভেদ তত্ত্বের চারিচন্দ্র হলোঃ রজঃ, শুক্র, মল ও মূত্র।
চারচন্দ্রভেদ বলতে কী বুঝায়?
উত্তর : চারচন্দ্রভেদ বলতে রজঃ, শুক্র, মল ও মূত্র-এ চার বস্তু গ্রহণ করাকে বুঝায়।
চারচন্দ্রভেদ বাউলদের কী ধরনের ক্রিয়া?
উত্তর : চারচন্দ্রভেদ বাউলদের এক সাধন প্রণালি। সহজ মানুষের স্বরূপ প্রাপ্তির লক্ষ্যে রজোবীজের মিলনের পূর্ণভাবের জন্য বাউলরা চারচন্দ্রভেদ সাধন প্রণালি আয়ত্ত করেন।
চারচন্দ্র গ্রহণের সময় বাউলরা কিরূপ আচরণ করেন?
উত্তর : চারচন্দ্র গ্রহণের সময় বাউল সাধকসাধিকারা নির্বিকার থাকে ও বিশ্বাস করে যে, ঘৃণা, লজ্জা, ভয় এই তিন থাকলে ঐকান্তিক সাধনা সম্ভব নয়।
বাউল দর্শনের প্রেমতত্ত্বের স্বরূপ কী?
উত্তর : বাউল দর্শনের প্রেমতত্ত্ব ঐশী প্রেমনির্ভর। তবে এই প্রেম জীবাত্মা ও পরমাত্মার মধ্যে ঐশী প্রেম নয়। এই
প্রেম একদিকে ‘সহজ’ হিসেবে পরমতত্ত্ব, অপরদিকে ‘জীব’ হিসেবে মানবাত্মার মধ্যকার প্রেম। অর্থাৎ বাউল দর্শনে যে প্রেমের কথা আছে তা মানব ব্যক্তিত্ব ও আত্মারূপে প্রকাশিত পরম ঐশী ব্যক্তিপ্রেম।
বাউল ধর্মের স্বরূপ কীরূপ?
উত্তর : বাউল ধর্ম বাংলার এক শ্রেণির মানুষের ধর্মচিন্তা, ধর্মবিশ্বাস, অধ্যাত্মচিন্তা যা বাঙালির সাধারণ মানুষের জীবনের অভিব্যক্তি। এই ধর্ম মানবতত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত, ঈশ্বর প্রত্যাদিষ্ট নয়।
বাউল ধর্মের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়সমূহ কী কী?
উত্তর : বাউল ধর্মের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়সমূহ হলো শুরু বা মুরশিদের নিকট অকপট আত্মসমর্পণ, মানবের হৃদয়স্থিত
ভগবান, অন্তর্যামী, জীবন দেবতা, মনের মানুষ বা আল্লাহর নিকট দৈন্য, সাধন ভজনের অক্ষমতার জন্য নৈরাজ্য, সাধন
জাগে দল, পদ্ম, চক্র, মোকাম-মঞ্জিল, ছয় বা দশ লতিফার ও লতিফাসমূহের নূর পতনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা ইত্যাদি ।
বাউল সাধনায় কী ব্যতীত সিদ্ধি লাভ করা যায় না?
উত্তর : বাউ । সাধনায় নারী ও পুরুষের মিলন ব্যতীত তথা বিপরীত দেহ ব্যতীত সিদ্ধি লাভ করা যায় না।
বাউলরা কিসের মাধ্যমে দেহ সাধনা করে?
উত্তর : বাউলরা রেচক, পূরক ও কুম্বের মাধ্যমে দেহসাধনা করে।
বাউল সাধনার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অংশ কী?
উত্তর : স্ত্রীর ঋতুস্রাবের প্রথম বিন্দু পান করা বাউল সাধনার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাছাড়া বীর্য পানও তাদের
সাধনার অংশ।
অধিবিদ্যক বা তত্ত্ববিদ্যক দিক থেকে বিচার করলে বাউল দর্শনে কোন ধরনের মতবাদের বিকাশ ঘটছে বলা যায়?
উত্তর : ইহজাগতিক অধ্যাত্মবাদ।
বাউল দর্শনের ইহজাগতিক অধ্যাত্মবাদ অনুসারে যথার্থ বা প্রকৃত সত্তা কী?
উত্তর : মন বা আত্মাই হলো যথার্থ বা প্রকৃতসত্তা যা মানুষের দেহে অবস্থান করে।
বাউল ধর্ম ও দর্শনে কিসের কোন ইঙ্গিত খুঁজে পাওয়া যায় না?
উত্তর : মানুষের মৃত্যুপরবর্তী জীবন বা পারলৌকিক চিন্তা-ভাবনার কোনো ইঙ্গিত বাউল ধর্ম ও দর্শনে খুঁজে পাওয়া যায় না।
জ্ঞানতাত্ত্বিক দিক থেকে বিচার করলে বাউল দর্শন কোন ধরনের মতবাদের অনুসারী?
উত্তর : মরমিবাদ।
বাউলদের কোন ধরনের আচরণ তাঁদের মরমিবাদী বলে প্রমাণ করে?
উত্তর : শাস্ত্রের প্রতি অনাস্থা এবং যুক্তিতর্কের অবতারণাকে গ্রাহ্য করার প্রতি অনীহাই তাদের মরমিবাদী বলে প্রমাণ করে ।
বাউল মরমিবাদে পরমসত্তাকে জানার উপায় কী?
উত্তর : বাউল মতে, পরমসত্তা বা সাঁইকে জানার একমাত্র উপায় হলো মন দিয়ে উপলব্ধি করা। দেহ ও মনের সম্মিলনে চরম অবস্থায় উন্নীত হলেই কেবল এরূপ উপলব্ধির সন্ধান পাওয়া যায়।
নীতিবিদ্যক দিক বিবেচনায় বাউল দর্শনে কোন মতবাদের চরম ও পরম বিকাশ ঘটেছে বলে মনে করা হয়?
উত্তর : মানবতাবাদ ।
বাউল দর্শনের মানবতাবাদের পরম বিকাশ ঘটেছে তাদের কোন মতাদর্শে?
উত্তর : বাউলদের শাস্ত্র বিমুখতায় গুরুবাদে এবং চারচন্দ্রভেদ তত্ত্বে।
শাস্ত্ৰ বা তত্ত্ব সম্পর্কে বাউলদের মত কী?
উত্তর : বাউলদের মতে, তত্ত্বের জন্য মানুষ নয় এমনকি মানুষের জন্যও তত্ত্ব নয়। মানুষ কোনো তত্ত্ব বা শাস্ত্রের অধীন নয়। মানুষের তৈরি কিংবা ঈশ্বর প্রদত্ত হোক কোনো শাস্ত্রই মানুষের উপর স্থান পেতে পারে না। শাস্ত্র মানা যেমন মানুষের উচিত নয়। তেমনি শাস্ত্র প্রণয়নও মানুষের কাজ নয়।
‘সবার উপরে মানুষ সত্য’ মানবতাবাদের এই মূল বাণীটি বাউলদের কোন তত্ত্বে চরম বিকাশ লাভ করেছে?
উত্তর : চারচন্দ্রভেদ তত্ত্বে । কেননা এই তত্ত্বমতে মানুষ এমন এক সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি যে তার কোনো অংশই ঘৃণার বিষয় নয়।
বাউলদের প্রেম সাধনার মূল উপাদান কী?
উত্তর : মানবদেহ তথা মানুষই বাউল সাধনার মূল উপাদান।
বাংলার কয়েকজন বিখ্যাত বাউলের নাম লিখ।
উত্তর : ফকির লালন শাহ্, পাগলা কানাই, পাঞ্জু শাহ্, চণ্ডী গোঁসাই, শেখ মদন, গোপাল গোঁসাই, বাখের শাহ্, শেষ
কিনু, আতর চাঁদ প্রমুখ।
বাংলায় বাউল ধর্ম ও দর্শনকে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?
উত্তর : ফকির লালন শাহ্।
লালন শাহের জন্ম কত সালে?
উত্তর : ১১৭৯ বঙ্গাব্দের ১ কার্তিক।
লালন শাহ কে ছিলেন?
উত্তর : লালন শাহ ছিলেন উনিশ শতকের বাংলার মরমি সাধক ও দার্শনিক কবি।
লালন শাহ তাঁর দার্শনিক চিন্তাধারার প্রকাশ ঘটিয়েছেন কীভাবে?
উত্তর : সংগীতের মাধ্যমে।
মরমি সাধক বলা হয় কাদের?
উত্তর : আপন হৃদয়ে পরম-সত্তাকে অপরোক্ষ অনুভূতি দিয়ে উপলব্ধিকারী সাধকরা সাধারণ মরমি সাধক নামে পরিচিত।
লালন শাহ প্রচারিত দর্শন কোন ধরনের?
উত্তর : লালন শাহের দর্শন মূলত মরমি দর্শন।
লালন শাহের দর্শনের মূলতত্ত্ব কী?
উত্তর : লালন শাহের দর্শনের মূলতত্ত্ব হলো আমিত্ব বা আত্মতত্ত্ব ।
লালন শাহের আমিত্ব বা আত্মতত্ত্বের মূল কথা কী?
উত্তর : লালন শাহের আমিত্ব বা আত্মতত্ত্বের মূল কথা হলো— জীবন ও জগতের কেন্দ্র হলো ‘আমি’ বা ‘আত্মা’৷ ‘আমিই সকল প্রকার জ্ঞান ও কর্মের মূল । এই ‘আমি’ একদিকে যেমন জগতের স্রষ্টা, অন্যদিকে তেমনি ভোক্তা । মানুষরূপী
দেহের মধ্যেই ‘আমি’ বা আত্মার বাস। তাই দেহের সাধনা ব্যতীত আত্মার সাধনায় সিদ্ধি লাভ করা সম্ভব নয়।
লালন শাহের মতে মন কী?
উত্তর : লালনের মতে, ‘আব-আতশ-খাক-বাত’-এর সংমিশ্রণজাত বস্তু মন।
বাংলার বাউলকূল শিরমণি বলা হয় কাকে?
উত্তর : লালন শাহকে।
লালন দর্শনের সোনার মানুষ হতে হলে কী করতে হয়?
উত্তর : সোনার মানুষ হতে হলে মানুষ ভজন করতে হয়।
বাউল সাধনার পদ্ধতি কী?
উত্তর : কামাচার বা মিথুনাত্মক যোগসাধনাই বাউল সাধনার পদ্ধতি ।
খ বিভাগ
প্রশ্ন॥১॥ বাউল শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে যা জান লিখ।
প্ৰশ্ন৷৷২৷৷ বাউল মতের উদ্ভবকাল সম্পর্কে যা জান লিখ।
প্রশ্ন॥৩॥ বাউল কারা?
প্রশ্ন॥৪॥ মরমি দর্শন বলতে কী বুঝ?
প্রশ্ন॥৫॥ বাউল দর্শনে গুরুবাদ লিখ ।
প্ৰশ্ন৷॥৬॥ বাউলদের জীবনাচার ও জীবনদর্শন সম্পর্কে যা জান লিখ।
প্রশ্ন॥৭॥ “বাউল দর্শন একটি ভাববিদ্রোহী, সমাজদ্রোহী প্রতিবাদী দর্শন”- ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।
প্ৰশ্ন॥৮॥ বাউলবাদ একটি সমন্বয়ী মতবাদ ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন॥৯॥ বাউল দর্শনের মানবতাবাদী চিন্তাধারা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
প্ৰশ্ন৷।১০৷৷ বাউলবাদের অধিবিদ্যক দিক ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন॥১১।। বাউল মতবাদের জ্ঞানতাত্ত্বিক দিক ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন॥১২।। বাউল দর্শনের দেহতত্ত্ব বা ভাণ্ড-ব্রহ্মাণ্ডবাদ সংক্ষেপে আলোচনা কর।
প্ৰশ্ন৷।১৩৷৷ বাউল ধর্মতত্ত্ব আলোচনা কর।
প্রশ্ন॥১৪।৷ বাউল দর্শনের প্রেমতত্ত্ব আলোচনা কর ।
প্ৰশ্ন৷।১৫৷। ঐশী প্রেম বা খোদায়ী পিরিত কী?
প্ৰশ্ন।৷১৬।৷ বাউল দর্শনের পরমতত্ত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর।
প্রশ্ন৷৷১৭।৷ বাউল দর্শনের গুরুবাদ বা মুর্শিদ তত্ত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর।
প্ৰশ্ন৷।১৮।৷ বাউল দর্শনের রূপ-স্বরূপতত্ত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর।
প্ৰশ্ন।৷১৯৷৷ বাউল দর্শনের মনের মানুষ তত্ত্ব আলোচনা কর।
প্রশ্ন।৷২০।৷ বাউলবাদের চারচন্দ্রভেদ তত্ত্ব সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন।৷২১।৷ বাউলদের প্রকৃতি সাধনতত্ত্ব আলোচনা কর ।
প্রশ্ন।৷২২।৷ লালন শাহ কে ছিলেন?
প্রশ্ন।৷২৩৷৷ লালন শাহের দর্শনকে মরমী দর্শন বলা হয় কেন?
প্রশ্ন।৷২৪।৷ বাউল ও বৈষ্ণব মতাদর্শ বা দর্শনের মধ্যে পার্থক্য কর।
প্রশ্ন।৷২৫৷৷ বাউল দর্শন ও সুফি দর্শনের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর।
গ বিভাগ
প্রশ্ন॥১॥ বাউল দর্শন কাকে বলে? বাংলাদেশে বাউল দর্শনের উদ্ভব ও ক্রমরিকাশ সম্পর্কে যা জান লিখ।
প্রশ্ন॥২॥ বাংলার বাউল ও তাঁদের জীবনাচার সম্পর্কে আলোচনা কর।
প্রশ্ন॥৩॥ বাউল দর্শনের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।
প্রশ্ন॥৪॥ “যাহা নাই ভাণ্ডে, তাহা নাই ব্রহ্মাণ্ডে” বাউলবাদের এ উক্তিটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা কর।
প্ৰশ্ন॥৫॥ বাউল দর্শনে স্বীকৃত তত্ত্বসমূহ আলোচনা কর ।
প্রশ্ন॥৬॥ বাউল দর্শনে লোকায়ত দর্শনের প্রভাব নিরূপণ কর।
প্ৰশ্ন॥৭॥ “বাউল দর্শনে মানবতাবাদের উৎকৃষ্ট বিকাশ ঘটেছে”- এ ধারণাটি ব্যাখ্যা কর ।
প্রশ্ন॥৮॥ বাউলগানের সাহিত্যিক মূল্য নিরূপণ কর।
প্রশ্ন॥৯॥ লোকসাহিত্য হিসেবে বাউল সম্প্রদায়ের মধ্যে কয়েকজনের পরিচয় দাও।
প্রশ্ন৷৷১০৷৷ বাউলগানের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশের বর্ণনা দাও।
প্রশ্ন॥১১৷ বাউল কারা? তাঁদের দেহাত্মবাদ ও রূপ-স্বরূপতত্ত্ব আলোচনা কর।
প্ৰশ্ন৷১২৷ বাঙালি দার্শনিক হিসেবে লালনশাহের দর্শন চিন্তা বিস্তারিত আলোচনা কর।
প্রশ্ন॥১৩৷ লালন শাহের মরমি দর্শন আলোচনা কর।
প্রশ্ন॥১৪৷। বাংলায় বিকশিত বিভিন্ন ধারার মরমিবাদ সম্পর্কে যা জান লিখ। লালন শাহের মরমি দর্শন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
প্রশ্ন॥১৫৷। মরমিদর্শন কী? লালনশাহের মরমিদর্শন ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন॥১৬ বাউল দর্শন ও সুফি দর্শনের মধ্যকার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।