General Knowledge

গৌতম বুদ্ধের নৈতিক শিক্ষাগুলো কী কী?

অথবা, গৌতম বুদ্ধের নৈতিক উপদেশাবলি উল্লেখ কর।
অথবা, বৌদ্ধ দর্শনের নৈতিক তত্ত্বগুলো সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
গৌতম বুদ্ধের বাণী ও উপদেশের উপর ভিত্তি করে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে যে মতবাদ গড়ে উঠেছে সে মতবাদকে বৌদ্ধদর্শন বলে। গৌতম বুদ্ধের নৈতিক শিক্ষার মূলে মোট চারটি দার্শনিক তত্ত্ব রয়েছে। এ চারটি তত্ত্ব হলো প্রতীত্য সমুৎপাদ বা শর্তাধীন সৃষ্টিবাদ, কর্মবাদ, ক্ষণিকত্ববাদ বা সর্বব্যাপক পরিবর্তনবাদ এবং অনাত্মাবাদ।
নিম্নে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. প্রতীত্য সমুৎপাদবাদ : বুদ্ধদেবের মতে, এই জগতে কোন বস্তু বা ঘটনা আত্মনির্ভর নয়। এখানে বিনা কারণে বা আকস্মিকভাবে কোন কিছু ঘটে না। প্রতিটি বস্তু বা ঘটনার কারণ আছে। জাগতিক সকল বস্তুই এক সর্বব্যাপক ও অবশ্য স্বীকার্য কার্যকারণ নিয়মের অধীন। এই কার্যকারণ নিয়মকে বৌদ্ধ দর্শনে প্রতীত্য সমুৎপাদ বলা হয়।
নিত্যবাদ ও উচ্ছেদবাদের মধ্যবর্তী : নিত্যবাদ অনুসারে, এমন কোন কোন সত্তা আছে যা নিত্য এবং সর্বকারণ নিরপেক্ষ। আর উচ্ছেদবাদ অনুসারে যে কোন বিদ্যমান বস্তু নিঃশেষে বিনাশপ্রাপ্ত হবে। বুদ্ধদেবের মতে, কারণ নিরপেক্ষ কোন নিত্য বা শাশ্বত বস্তু নাই এবং কোন বস্তুর সম্পূর্ণ বিনাশও নাই। সুতরাং তার এ মতবাদকে নিঃসন্দেহে মধ্যবাদ বলা হয়।
২. কর্মবাদ : কর্মবাদ অনুসারে মানুষের তার কৃতকর্মের ফল অবশ্যই ভোগ করতে হবে। যে যেমন কর্ম করবে তাকে সেরূপে ফল ভোগ করতে হবে। কর্মবাদ অনুযায়ী মানুষের বর্তমান অবস্থা তার প্রাক্তন কর্মের অবস্থা। এই নিয়ম অলংঘনীয়।
কর্মফল সঞ্চিত থাকে : বৌদ্ধ মতে, সকল মানুষ এক রকম না হওয়ার কারণ হলো তাদের কৃতকর্ম। বিভিন্ন মানুষের কর্মের পার্থক্য আছে। বৌদ্ধ মতে, কর্মফলের ভোগ শেষ না হলে তা পরজন্মের জন্য সঞ্চিত থাকে কিন্তু বিনষ্ট হয় না।
৩. সর্বব্যাপক পরিবর্তনবাদ : সর্বব্যাপক পরিবর্তনবাদ অনুসারে, জগতের সবকিছুই পরিবর্তনশীল এবং সবকিছুই ধ্বংসশীল। বুদ্ধদেব বলেন, যার আদি আছে তার অন্তও আছে। যার জন্ম আছে তার মৃত্যুও আছে। অক্ষম চিরস্থায়ী বা নিত্য বলে কিছুই নাই। জগতের সবকিছু ক্ষণস্থায়ী : বুদ্ধদেবের মতে, জগতের সব বস্তু কেবল অনিত্য নয়, এগুলো একেবারে ক্ষণস্থায়ী অর্থাৎ এগুলো মাত্র একটি ক্ষণের জন্য স্থায়ী। জগতের সব বস্তুই অনিত্য এবং ক্ষণিক।
৪. অনাত্মবাদ : বুদ্ধদেব মানুষের মধ্যে শাশ্বত ও চিরন্তন আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। তাঁর মতে, জগতে সব কিছুই যখন নিত্য তখন চিরন্তন আত্মার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে, মানুষের আত্মা নিত্য ও চিরন্তন। দেহের নানাবিধ পরিবর্তনের মধ্যেও আত্মা অপরিবর্তিত থাকে। দেহের বিনাশ আছে কিন্তু আত্মার বিনাশ নাই।
কিন্তু বুদ্ধদেবের মতে, আত্মা বলে এরূপ কোন নিত্য বস্তু নাই ।
আত্মা চেতনার প্রবাহ : বুদ্ধদেবের মতে, মানুষের আত্মা হলো তার চেতনার অবিরাম প্রবাহ। মানুষের মধ্যে সুখ-দুঃখ প্রভৃতি নানা রকমের অনুভূতি, চিন্তা ও ইচ্ছা অহরহ আসা যাওয়া করছে। এ সকল মানসিক প্রক্রিয়ার ধারা বা প্রবাহই হলো আত্মা ।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, গৌতম বুদ্ধের নৈতিক উপদেশগুলো ছিল তার দার্শনিক শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য। তিনি এ বিশ্বজগৎ, মানুষ, মানুষের কর্মফল, আত্মা, জাগতিক পরিবর্তন প্রভৃতি বিষয়ে যে নৈতিক মতবাদ প্রদান করেছেন তার দার্শনিক গুরুত্ব অপরিসীম। তার মতবাদের নানা ত্রুটির কথা পরবর্তীকালে উত্থাপিত হলেও এ মতবাদের মূল্যকে অস্বীকার করা যায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!