গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কমিটি (ড্যাক) এর গঠন কাঠামো আলোচনা কর ।
অথবা, গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কমিটি (ড্যাক) এর
গঠন বৈশিষ্ট্য লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১১ দফা আন্দোলনকে সফল করতে বাংলার জনগণকে সাথে নিয়ে শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা একত্রিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন। তারা স্বাধিকার অর্জন বা প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন লাভের জন্য বদ্ধপরিকর ছিলেন। তারই একটি প্রচেষ্টা হিসেবে তারা গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন।
গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কমিটির গঠন কাঠামো : ৬ দফা কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করে ছাত্ররা ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। কেন্দ্রীয় শাসন থেকে বাঙালিদের আর্থ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্বাধিকার অর্জনই ছিল এর মূল কথা। ১১ দফা ঘোষণার পর ৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, জামায়াতে ইসলামী, কাউন্সিল মুসলিম লীগ ও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট একটি যৌথ ফ্রন্ট গঠন করে। এ যৌথ ফ্রন্টের নাম দেয়া হয় ‘গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ” বা “ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি” বা ড্যাক। ন্যাপ ভাসানী ও ভুট্টোর পিপলস পার্টি এতে যোগ দানে অস্বীকৃতি জানায়। ড্যাক বা ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি ৮ দফার ঘোষণা দেয়। যথা :
১. ফেডারেল প্রকৃতির পার্লামেন্টারি শাসনব্যবস্থা কায়েম।
২. প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে প্রত্যক্ষ নির্বাচন।
৩. জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার।
৪. পূর্ণ নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা।
৫. রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি ও গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার।
৬. ফৌজদারি কার্য বিরোধী ধারায় জারিকৃত সকল আদেশ প্রত্যাহার।
৭. শ্রমিক ধর্মঘটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
৮. নতুন ডিক্লারেশন দানের উপর বিধিনিষেধ প্রত্যাহার প্রভৃতি।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা, ছাত্রদের ১১ দফা ও রাজনৈতিক জোটের ৮ দফা, বাঙালিদের স্বাধিকার প্রশ্নে আরো উজ্জীবিত করে। ফলে বাঙালিদের মধ্যে সচেতনতা জাগ্রত হয় এবং জাতীয়তাবোধের বিকাশ ঘটে। গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কমিটি বাঙালির জাগরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধ্যায়।