অথবা, গঠন অনুসারে পরিবারকে কীভাবে ভাগ করা হয়? লিখ।
অথবা, গঠন অনুসারে পরিবারকে কয়টি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়? লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : অতীতের মানুষেরা হিংস্র জীবজন্তু থেকে আত্মরক্ষা তথা জীবনধারণ এবং আহার্য সংগ্রহ করার অভিপ্রায়ে নিজস্ব প্রয়োজনে সংঘবদ্ধ জীবন গড়ে তোলে। মানুষের এ দলবদ্ধ জীবনের প্রাচীনতম রূপটি পরিবার বা Family. পরিবারকে তাই সমাজের “Ancient, Basic and Smallest” সংগঠন বলা হয়। বস্তুত পরিবারেই মানুষের জন্ম,
বিকাশলাভ, এমনকি মৃত্যুও সাধিত হয়। এজন্যই Robert Bierstedt মন্তব্য করেছেন, “Of all the groups that affect the lives of the individuals none touches so intimately or so continuously as does the family.” বিবাহ হচ্ছে পরিবারের ভিত্তি। আর স্বামী এবং স্ত্রীর বিবাহ বন্ধন দ্বারাই পরিবারের সৃষ্টি। তাই বলা যায়, পরিবার হচ্ছে একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রীলোকের বৈধভাবে বসবাস করার একটি সংগঠন, যেখানে সন্তান উৎপাদন ও প্রতিপালনের অধিকার আইনসংগত।
পরিবার গঠন অনুসারে : পরিবারের গঠন অনুসারে পরিবারকে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যায় :
ক. ক্ষুদ্র পরিবার (Nuclear family) : Nuclear family is composed of husband and wife and their
unmarried children Modern America-র ন্যায় শিল্পায়িত সমাজ এবং বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে ক্ষুদ্র পরিবার অহরহ গড়ে উঠেছে। এর প্রধান কারণ শিল্পকারখানাগুলো শহরে গড়ে উঠায় শ্রমিকরা স্ত্রী ছেলেমেয়েদেরকে গ্রাম থেকে শহরে নিয়ে এসে ক্ষুদ্র পরিবার গড়ে তুলছে। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের উন্মেষ এবং পারিবারিক ঝগড়া বিবাদ ও ক্ষুদ্র পরিবার গড়ে উঠার মূলে ক্রিয়াশীল।
খ. বর্ধিত পরিবার (Extended family) : বর্ধিত পরিবারে সম্পত্তি সাধারণ মালিকানায় থাকে । সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে সম্পত্তির মালিকানা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির প্রাধান্য লক্ষণীয়। Burgess and Locke ‘The Family’ বইতে বর্ধিত পরিবারকে সমগ্র এশীয় সমাজ তথা শিল্পায়িত জাপানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেছেন।
কর্তৃত্ব অনুসারে (According to Authority) : কর্তৃত্ব অনুসারে পরিবারকে নিম্নলিখিত শ্রেণিতে ভাগ করা যায় :
ক. পিতৃপ্রধান পরিবার ( Patriarchal family) : বস্তুত যে সময় থেকে পুরুষরা মেয়েদের উপর প্রাধান্য বিস্তার শুরু করে, তখন থেকে পিতৃপ্রধান পরিবারের উদ্ভব হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাচীন রোমের কথা বলা যায়। সেখানে পিতা ইচ্ছা করলে সন্তানকে বিক্রি করতে এমনকি মেরে ফেলতেও পারতেন। পুরুষের একচেটিয়া আধিপত্য হেতু বাংলাদেশের অধিকাংশ পরিবারই পিতৃপ্রধান।
খ. মাতৃপ্রধান পরিবার (Matriarchal family) : এ পরিবারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে সম্পত্তির মালিকানা পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে মহিলাদের বিশেষ করে মায়েদের ভূমিকাই প্রধান। নৃবিজ্ঞানী Bachofen ও Briffault তাদের তত্ত্বে মাতৃপ্রধান পরিবার; পিতৃপ্রধান পরিবারের পূর্বে এসেছে বলে উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের গারো ও খাসিয়া উপজাতির মধ্যে Matriarchal family লক্ষণীয়।
গ. সমতাভিত্তিক পরিবার (Egalitarian family) : এটি পরিবারের একটি আধুনিক রূপ । এক্ষেত্রে সম্পত্তি থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী তাদের যৌথ মতামতকে প্রাধান্য দেয়। উন্নত বিশ্বের বেশিরভাগ সমাজে এবং বর্তমানে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেও সমতাভিত্তিক পরিবার লক্ষণীয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমাজব্যবস্থায় বিভিন্নতার কারণে পরিবার ব্যবস্থা বিভিন্ন রকম রয়েছে। বর্তমানে সভ্যসমাজ মানুষকে একক পরিবার গঠনে উৎসাহিত করে। গঠন অনুসারে পরিবারের প্রকারভেদসমূহ দুটি বিষয়ের উপর আলোচনা করেছেন। আর বিষয় দুটি যথা- ১. আকার ও ২.কৰ্তৃত্ব ৷উপর্যুক্ত আলোচনার বিষয় দুইটি মধ্যে পরিবারের আকার এবং কর্তৃত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। সুতরাং বলা যায় যে, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় অধিকাংশ পরিবারই পিতৃপ্রধান। পুরুষরাই পরিব
ার কর্তৃত্ববজায় রাখে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে এখন পিতৃতান্ত্রিক ও একক পরিবার ব্যবস্থার প্রসার লাভ করছে।