কোথায় রেখেছো বলো মহুয়ার মাটির বোতল নিয়ে এসো চন্দ্রালোকে তৃপ্ত হয়ে আচমন করি।”—ব্যাখ্যা কর।
উৎস : আলোচ্য অংশটুকু কবি আল মাহমুদ রচিত ‘সোনালী কাবিন : ৫’ শীর্ষক কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : এখানে প্রেমিক-প্রেমিকার মাতাল মনের স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে।
বিশ্লেষণ : মানব-মানবী চিরন্তন কাল ধরে আদিমতায় মত্ত। অনাদিকাল ধরে মানব-মানবীর মধ্যে শরীরী আকর্ষণের খেলা চলছে। যৌনরস আত্মাকে অবগাহন করে সত্য কিন্তু দৈহিক উষ্ণতাকে আত্মাই বা অস্বীকার করে কীভাবে? অনাদিকাল থেকে, আদিম যুগ থেকে, আদিমতায় যেতে চলেছে মানব-মানবী। চর্যাপদে বৌদ্ধতান্ত্রিকদের পদে শবর ও শবরী বালিকার প্রেমনির্যাসের ধারা প্রবাহিত হয়েছে। প্রাচীন সমাজে শবর-শবরী বনে বাস করত। এরা পশু শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। শবর বালক কখন নিসর্গে উন্মাতাল হয়ে শবরী বালিকাকে সন্ধান করত এবং শবরী বালিকা তখন গলায় গুঞ্জার মালা, কানে কার্পাসের ফুল ও হাতে মহুয়ার বোতল নিয়ে যৌন উন্মাদনায় মত্ত হতো। কবি মানব-মানবীর আদিম সত্তাকে যেভাবে উন্মোচন করেছেন, সেখানে যৌনরস মন্থনের ধারাই প্রবাহিত। আদিম ব্যাধ সমাজে যৌন উন্মাদনার সময় মহুয়া ফলের নির্যাস পান করা হতো। এমনকি পূর্ণিমার রাতে শবর-শবরীরা মহুয়া ফুলের নির্যাস পান করত। কবি আজ প্রকৃতির মতই প্রেমিকার নিকট নিজেকে উন্মুক্ত করে দিতে চান এবং চন্দ্রালোকে তৃপ্ত হয়ে আচমন করতে চান।
মন্তব্য : শবর-শবরী প্রিয়ার সান্নিধ্য লাভে উন্মুখ। শবর শবরীকে মদের বোতল নিয়ে যৌন উন্মাদনায় আসতে বলেছে।