অথবা, কৃষি স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বণ্টনের সমস্যা ও সমাধান ব্যাখ্যা কর।
অথবা, কৃষি স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বণ্টনের প্রতিবন্ধকতা ও সমাধান ব্যবস্থার বিবরণ দাও।
অথবা, কৃষি স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বণ্টনের বাধা ও দূরীকরণের উপায় আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত কৃষি উদ্ভাবন। কারণ অতীতে কৃষির গুরুত্ব যেমন সর্বজনীন ছিল, বর্তমানে সে রূপ না থাকলেও অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য কৃষি অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করছে। আজকের শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিটিই মূলত কৃষিনির্ভর দেশ ছিল ।
বণ্টন ক্ষেত্রে সমস্যা : উৎপাদন ব্যবস্থা কোন দেশেই সকল অঞ্চলে এক রকম হয় না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম উৎপাদন হয় বলে উৎপাদিত ফসলের বণ্টন ব্যবস্থা সুষ্ঠু হওয়া বাঞ্ছনীয়। বাংলাদেশে এ বণ্টন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে । নিম্নে সমস্যাসমূহ উলেখ করা হলো :
১. খাদ্যশস্য ও ক্রয় বণ্টন : বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে কম বেশি খাদ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। যেসব অঞ্চলে বেশি উৎপাদন হয়, সেসব অঞ্চলে ফসলের দাম কম থাকে। আবার যে এলাকায় কম ফসল উৎপাদন হয়, সে এলাকায় পছেন কম বেশি থাকে। এ অবস্থায় সরকারি পর্যায়ে ও সরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে যে এলাকায় উৎপন্ন ফসলের দাম কম সেসব এলাকার পণ্যসামগ্রী সঠিক দামে ক্রয় করার ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। বাংলাদেশে এ সমস্যার কোন সমাধান আজও সম্ভব হয়নি। তাছাড়া এ ধরনের ক্রয় ব্যবস্থার মাধ্যমে অধিক চাহিদার এলাকায় দ্রুত স্থানান্তর করে দেশের সর্ব
অঞ্চলের পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা নেই। অর্থা বণ্টন ব্যবস্থার অভাবে কোনো এলাকায় পণ্যের অতিরিক্ত যোগান রয়েছে। আবার কোন এলাকায় অতিরিক্ত চাহিদা রয়েছে। এ ধরনের বণ্টন ব্যবস্থার সুষ্ঠু সমাধান হলো একমাত্র সরকারি উদ্যোগ ও সুষ্ঠু নীতি প্রণয়ন। বাংলাদেশে রেশনিং ব্যবস্থা চালু থাকলেও তা শ্রেণিভিত্তিক বৈষম্যকরণ হওয়ায়
বণ্টনের ক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতা দেখা যায়। শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ানের মতো দেশে সরকার জনগণের মধ্যে ব্যাপক
ও পরিকল্পনা কার্যক্রম দ্বারা রেশনিং ব্যবস্থার মাধ্যমে সুষ্ঠু বণ্টন চালু রাখতে সক্ষম হয়েছে।
২. রাজনৈতিক ও সামাজিক বাধা : যেসব উন্নয়নশীল দেশে ভূমি সম্পদ অপর্যাপ্ত, জনসংখ্যার চাপ অত্যন্ত বেশি। শিল্পোন্নয়নের সুযোগ কম, সেসব দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়বে সন্দেহ নেই। তবে বণ্টন ব্যবস্থার কোন সুষ্ঠু ন্যায়বিচার প্রতিম করা রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণে সম্ভব হয় না। দীর্ঘমেয়াদি উৎপাদন ও বণ্টনের ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানে Griffin যথার্থই মন্তব্য করেন যে, যেসব উন্নয়নশীল দেশে বিশেষ করে বাংলাদেশে ভূমি সম্পদ অপর্যাপ্ত এবং অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ আছে, সেসব দেশে কৃষি উন্নয়ন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য i. প্রকৌশল উন্নয়ন দ্রুত করতে হবে ii.কৃষিতে মূলধন বেশি করে বিনিয়োগের মাধ্যমে জমি বাঁচানো উৎপাদন কৌশল অনুসরণ করতে হবে। উপর্যুক্ত দুটি বিকল্প পদ্ধতির উন্নয়ন সংক্রান্ত নীতি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশেই ভূমি জাতীয়করণ বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক কারণে সম্ভব নয় এবং এ কারণেই ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থার পরিবর্তন না করলে উৎপাদন ও বণ্টন সুষ্ঠু হবে না।
সমাধান : বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো, কৃষি ও কৃষির সাথে সংশিষ্ট শিল্প খাতের বর্তমান পরিস্থিতি ইত্যাদি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশেষণ করার পর K. Griffin এসব দেশে কৃষিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে সাফল্যজনকভাবে বণ্টন ও ব্যবহারের জন্য নিম্নলিখিত পরামর্শ প্রদান করেন :
১. আয়ের সুষম বণ্টন যা খাদ্যের অনেকটা সুষম বণ্টন নিশ্চিত করবে। এ
রূপ নীতির অধীনে রেশনিং প্রথা দরকার হবে না। দ্রব্যের আকারে কর সংগ্রহের বা সরকারি প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে খাদ্যের প্রক্রিয়া এবং
বাজারজাতকরণের প্রয়োজন পড়বে না।
২. ভূমির জাতীয়করণ যা ভূস্বামী শ্রেণি এবং ব্যক্তিগত খাজনার বিলোপসাধন করবে। ভূমির মালিক হিসেবে রাষ্ট্রে পক্ষে খাজনা আদায় করা সম্ভব হবে; আদায়কৃত খাজনা ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্র বাজার উদ্বৃত্ত প্রভাবিত করছে সক্ষম হবে। তদুপরি এটার মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকা হতে শহর এলাকায় প্রয়োজনীয় সম্পদ স্থানান্তরের কার
করাও সম্ভব হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, এভাবে উপর্যুক্ত নীতির সমন্বিত প্রয়োগের মাধ্যমে সরকারের পক্ষে ভোগ দ্রব্যের বণ্টনের পরিমাণ ও মূলধনের গঠনের হার এবং প্রকৃতি নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। এভাবে উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত বাজার উদ্বৃত্তের সমস্যাটি সমাধান করা সম্ভব।