General Knowledge

কাঠামো কার্যগত তত্ত্বের সুবিধা আলোচনা কর।

অথবা, কাঠামো কার্যগত তত্ত্বের ইতিবাচক দিকগুলো আলোচনা কর।
অথবা, কাঠামো কার্যগত তত্ত্বের সুফল আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
কাঠামো কার্যগত তত্ত্বের তাত্ত্বিকগণ কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে দুটি পৃথক উপায়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। প্রথমত, একে ‘সরকার’ বা ‘সার্বভৌম রাষ্ট্র’ বলে ব্যাখ্যা করা হয়। দ্বিতীয়ত, এটাকে রাজনৈতিক কার্য সম্পাদনকারী সামাজিক কাঠামো হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়। এ দ্বিতীয় ধারণাই কাঠামো কার্যগত পদ্ধতি হিসেবে তুলনামূলক রাজনীতিতে প্রচলিত হয়ে আসছে। ১৯৪০ এবং ১৯৫০ এর দশকে পারসন্স এ তত্ত্বের উন্নতি ঘটালেও ১৯৬০ সালে প্রকাশিত অ্যালমন্ড ও কোলম্যান সম্পাদিত ‘The Politics of the Developing Areas’ গ্রন্থটি এ তত্ত্বের বিকাশে মাইলফলক হিসেবে কাজ করেছে।
কাঠামো কার্যগত তত্ত্বের সুবিধা (Advantage of structural functionalism) : কাঠামো কার্যগত তত্ত্বের সুবিধাসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের বিশ্লেষণ : কাঠামো কার্যগত তত্ত্ব রাজনীতির সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা প্রদান করে। এ তত্ত্ব ইনপুট ও আউটপুটের সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা থেকে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় উপনীত হয়েছে। এ তত্ত্ব একটি সমাজের সামগ্রিক পরিবেশের প্রেক্ষিতে রাজনীতি ব্যাখ্যা করে।
২. পরিমাপযোগ্য ও প্রয়োগযোগ্য : কাঠামো ও কার্যের মাধ্যমে অ্যালমন্ড রাজনীতির যে ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন তা পরিমাপযোগ্য ও প্রয়োগযোগ্য। কাঠামোসমূহের দক্ষতা, রূপান্তর প্রক্রিয়ার দক্ষতা এবং ব্যবস্থা সংরক্ষণ ও অভিযোজনের দক্ষতা পরিমাপযোগ্য। তাই এ তত্ত্ব রাজনীতি অধ্যয়নে প্রয়োগযোগ্য।
৩. স্থিতিশীলতা ব্যাখ্যা : কাঠামো কার্যগত তত্ত্বে একদিকে যেমন পরিবর্তন, অন্যদিকে তেমনি ‘স্থিতিশীলতা ও ব্যবস্থার সংরক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তনশীল পরিবেশের মধ্যে কিভাবে টিকে থাকে তা এ তত্ত্বে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
৪. তুলনামূলক বিশ্লেষণ : তুলনামূলক বিশ্লেষণে এ পদ্ধতি খুবই উপযোগী। অ্যালমন্ড পাশ্চাত্যের সাথে প্রাচ্যের সমাজ ও রাজনীতির তুলনামূলক ব্যাখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় এবং পর্যাপ্ত উপায় ও পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। ফলে রাজনীতি বিশ্লেষণে এ তত্ত্ব সফলভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়েছে।
৫. সামাজিক উপাদানের উপর অধিক গুরুত্বারোপ : কাঠামো কার্যগত তত্ত্ব সামাজিক উপাদানসমূহের উপর অত্যধিক গুরুত্বারোপ করে এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সামাজিক পরিবেশের প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করে বলে কেন পরিবর্তন সূচিত হয়, কিভাবে হয় এবং তার ফলাফল সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে।
৬. অ্যালমন্ডের ব্যাখ্যা : অ্যালমন্ড কার্য কি ধরনের কাঠামো দ্বারা সম্পাদিত হয়, এর উপর ভিত্তি করে রাজনীতি তুলনামূলক অধ্যয়ন করেছেন। ফলে একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের কার্য এবং সেগুলোর সম্পাদনকারী কাঠামোসমূহ চিহ্নিতকরণে অ্যালমন্ড সীমাহীন দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
৭. ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান : কাঠামো কার্যগত তত্ত্ব রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম। যেহেতু এটি বিভিন্ন সামাজিক উপাদানের প্রেক্ষিতে রাজনীতি অধ্যয়ন করে, কাজেই ইনপুট ও আউটপুটের ক্ষেত্রে কখন ও কি ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে এ ব্যাপারে দক্ষতার সাথে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপেক্ষিতে বলা যায় যে, কাঠামো কার্যগত তত্ত্ব বিগত কয়েকদশক ধরেসমাজবিজ্ঞানে কার্যগত তত্ত্ব বিগত কয়েকদশক ধরে সমাজবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সমাজের রাজনৈতিক বিষয়বলী বিশ্লেষণে এ তত্ত্বের সুবিধা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে । তুলনামূলক সমাজ বিশ্লেষণে এ তত্ত্বের সমালোচনা অনেক বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!