General Knowledge

কর্মবাদ কত প্রকার ও কী কী?

অথবা, কর্মবাদের প্রকারভেদ লিখ ।
অথবা, ভারতীয় দর্শনে কর্মবাদের শ্রেণিবিভাগ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
ভারতীয় দর্শন ও জীবন কর্মবাদের দ্বারা পরিচালিত। ভারতীয় দার্শনিকরা কর্ম নিয়মে বিশ্বাসী। ভারতের সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা, বেদান্ত, বৌদ্ধ ও জৈন দর্শনে কর্ম নিয়ম এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। ভারতীয় দার্শনিকদের মতে, যে সনাতন নৈতিক নিয়ম গ্রহ, নক্ষত্র, দেবতা, মনুষ্য প্রভৃতি বিশ্বের সমস্ত বস্তুকে পরিচালিত করে, সেই নিয়মের উপর সাধারণভাবে কর্মবাদ গড়ে উঠেছে। আদি যুগ হতেই ভারতীয় মনীষীর কর্ম নিয়মের প্রয়োজন অনুভব করেছেন।
কর্মবাদ : কর্মবাদের সহজ অর্থ হলো, যে যেমন কর্ম করে, সে তেমন ফল পায় এবং কর্মকর্তাকে তার ভাল মন্দ সব কর্মের ফল ভোগ করতে হয়। কোন জীবের পক্ষেই কর্মফল ভোগ হতে অব্যাহতি লাভ সম্ভব নয়। কর্মবাদ বা কর্ম নিয়মকে নৈতিক কার্যকারণবাদও বলা হয়ে থাকে। কারণ থাকলেই যেমন কার্য থাকে, তেমনি কর্ম থাকলেই কর্মফল ভোগ থাকবে।
কর্মবাদের প্রকারভেদ : জগতে প্রতিনিয়ত মানুষ কর্ম করছে। নানা সময়ে মানুষ নানা কর্ম করে। এসব কর্ম তারা সম্পাদন করে থাকে বিভিন্ন কারণে। উদ্দেশ্যের মানদণ্ডের ভিত্তিতে বিচার করলে কর্মকে ভাগে ভাগ করা হয়। যথা :
i. সকাম কর্ম, ii নিষ্কাম কর্ম।
কাম কর্ম : ফল ভোগের আশা নিয়ে যেসব কাজ করা হয় সেসব কাজকে সকাম কর্ম বলা হয়। এসব কাজের পেছনে মানুষের একটি মাত্র উদ্দেশ্য থাকে, আর তা হলো তার কর্মটির বিনিময়ে কিছু পাওয়া অর্থাৎ কর্মফল হিসেবে এক্ষেত্রে ইতিবাচক কিছু পাওয়ার আশা করা হয়। যেমন- মানুষ বৃক্ষ রোপণ করে। কারণ তারা আশা করে বৃক্ষটি বড় হয়ে ফল প্রদান করবে, ছায়া প্রদান করবে এবং বাতাস প্রদান করবে। ভারতীয় দর্শনে সকাম কর্ম বলতে জাগতিক উদ্দেশ্য সম্বলিত কর্মকে বুঝায়।
নিষ্কাম কর্ম : কোন প্রকার ফল ভোগের আশা ত্যাগ করে যেসব কর্ম করা হয় সেসব কর্মকে নিষ্কাম কর্ম বলা হয়। সাধারণত বেদ নির্দেশিত বা আপ্তপুরুষের নির্দেশ মোতাবেক যে কর্ম পরিচালিত হয় সেসব কর্মকে নিষ্কাম কর্ম বলে। এসব কর্মের পেছনে জাগতিক কোন উদ্দেশ্যবোধ কাজ করে না। পরমসত্তার সন্তুষ্টি অথবা মানুষের মুক্তির বিষয়টিই এখানে
প্রধান বিবেচ্য বিষয়। আবার অপর এক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে মানুষের কর্মকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
৩. সঞ্চীয়মান কর্ম।
১. সঞ্চিত কর্ম,
২. আরদ্ধ কর্ম,
১. সঞ্চিত কর্ম : যে কর্ম অতীতে সম্পাদন করা হয়েছে কিন্তু এখনো ফল প্রদান করে নি। সে কর্মকে সঞ্চিত কর্ম বলে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে ফল প্রাপ্তির আশা নিয়ে অতীতে মানুষ যে কর্ম সম্পাদন করেছে তাই সঞ্চিত কর্ম।
২. আরদ্ধ কর্ম : ফল লাভের আশা নিয়ে মানুষ অতীতে যে কাজ সম্পাদন করেছে এবং ইতোমধ্যে ফল প্রাপ্তি শুরু হয়েছে সেসব কর্মকে আরদ্ধ কর্ম বলে। আরদ্ধ কর্মে ফলপ্রাপ্তি একটি চলমান প্রক্রিয়া। অর্থাৎ অতীত কর্মের ফল মানুষ বর্তমানেও ভোগ করছে এবং ভবিষ্যতেও ভোগ করবে।
৩. সঞ্চীয়মান কর্ম : যে কর্ম ফললাভের আশা নিয়ে বর্তমানে করা হচ্ছে কিন্তু কোন ফললাভ হয় নি তবে ভবিষ্যতে ফললাভ হবে সে সকর্মকে সঞ্চীয়মান কর্ম বলে। এক্ষেত্রে কর্ম বর্তমান আর ফললাভ ভবিষ্যতের ঘটনা।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, কর্মবাদে বিভিন্ন মানদন্ডের ভিত্তিতে কর্মকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। অনিবার্য কার্যকারণ নিয়মের যেমন কোন ব্যতিক্রম নেই, তেমনি কর্ম নিয়মেরও তেমন কোন ব্যতিক্রম নেই । কর্ম নিয়মে বিশ্বাস ছাড়া মানুষের বিভিন্ন সুখ-দুঃখ ভোগের এবং প্রতিভা লাভের সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না। একই অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে কেউ সুখী, কেউ অসুখী এর ব্যাখ্যা একমাত্র কর্ম নিয়মই দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!