General Knowledge

ইয়াহিয়া খানের এক ইউনিট বিলুপ্তিকরণ সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, কে এক ইউনিট প্রথা সংস্কার করে তা বিশদ আলোচনা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা :
আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল করে ১৯৬২ সালে এক সংবিধান প্রণয়ন করেন। ১৯৬২ সালের সংবিধানে আইয়ুব খান প্রদেশ এর বিলুপ্তি ঘোষণা করে এবং কেন্দ্রীভূত শাসন প্রক্রিয়া চালু করে। কিন্তু আইয়ুব শাসনের পতন হলে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় আসে। তিনি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য এক ইউনিট প্রথার বিলুপ্তি ঘোষণা করেন। যা ইয়াহিয়ার শাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল।
এক ইউনিট’ ব্যবস্থার উৎপত্তি : ১৯৬২ সালের সংবিধানে প্রদেশের বিলুপ্তি ঘোষণা করে রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে কেন্দ্রীভূত শাসন চালু করে। ১৯৬২ সালের সংবিধানের আওতায় রাষ্ট্রপতি, জাতীয় ও প্রাদেশিক আইনসভার সদস্যবৃন্দ ৮০,০০০ মৌলিক গণতন্ত্রীদের দ্বারা নির্বাচিত হতেন, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতেন না। কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিগণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত ও তার মর্জির উপর নির্ভরশীল ছিলেন। এমনকি কেন্দ্রীয় আইনসভা ছিল তার আজ্ঞাবহ প্রদেশের গভর্নরগণ ও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত ও একমাত্র তার কাছে জবাবদিহি ছিলেন। রাষ্ট্রপতির সম্মতি ব্যতীত তারা প্রাদেশিক পর্যায়ে কোন মন্ত্রীকে নিয়োগ বা বরখাস্ত করতে পারতেন না। প্রাদেশিক সরকারের অবস্থা দাঁড়ায় এককেন্দ্রিক ব্যবস্থাধীন স্থানীয় সরকারের কোন ইউনিট বা সংস্থার অনুরূপ। এভাবে আইয়ুব প্রবর্তিত ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি হচ্ছে ক্ষমতার মধ্যমণি। তাকে কেন্দ্র করে সবকিছু আবর্তিত-নিবর্তিত। একে বলা যায় “Government of the President, by the President and for the President.” রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কে.বি. সাইয়িদ একে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন আমলের ‘ভাইস-রিগেল’ ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করেন।
ইয়াহিয়ার এক ইউনিট প্রথা বাতিলকরণ : অশান্তময় রাজনৈতিক পরিবেশে ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সারা পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন। জাতির উদ্দেশ্যে এক বেতার ভাষণে তিনি অচিরেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জনপ্রতিনিধিদের গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দেন। আইয়ুব খানের ১৯৬২ সালের সংবিধানসহ পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষিদ বাতিল ঘোষণা করেন। ১৯৬৯ সালের ৩ এপ্রিল নতুন জান্তা সরকার একটি শাসন পরিষদ গঠন করেন বং ৪ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট হিসেবে এক অস্থায়ী সাংবিধানিক আদেশ জারি করেন। ১৯৭০ সালের ৫ অক্টোবর সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পাকিস্তানের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলেঘোষণা প্রদান করেন। এ উদ্দেশ্যে ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে রাজনৈতিক কার্যকলাপে উপর প্রবর্তিত বাধানিষেধ প্রত্যাহার করে এবং সাবেক পশ্চিম পাকিস্তানের ‘এক ইউনিট’ প্রথা বাতিল করেন। জেনারেল ইয়াহিয়া খান নির্বাচনের জন্য আইনগত কাঠামো আদেশ জারি, নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ, গণতন্ত্র
প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মূলত এক ইউনিট প্রথা বাতিল করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার যে প্রক্রিয়া আইয়ুব খান করেছিল তাকে ক্ষমতার এক ইউনিট প্রথা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্যও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইয়ুব খানের ‘এক ইউনিট’ প্রথার বিলুপ্তি করে। যা ইয়াহিয়া খানের শাসনামলের
একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!