অথবা, চার্বাকদের ইন্দ্রিয়াত্মবাদ সংক্ষেপে লিখ ।
অথবা, চার্বাকদের ইন্দ্রিয়াত্মবাদ বলতে কী বুঝ?
অথবা, চার্বাক ইন্দ্ৰিয়াত্মবাদ কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : চার্বাক দর্শনের কোন মূল গ্রন্থ পাওয়া না যাওয়ায় এ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠাতা যেই হোক না কেন, চার্বাক দর্শন বলতে মূলত নাস্তিক দর্শন বা জড়বাদী দর্শনকেই বুঝায়। চার্বাকরা প্রত্যক্ষণকেই জ্ঞানের একমাত্র প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তারা ঈশ্বর, আত্মা ইত্যাদির অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছে।
ইন্দ্রিয়াত্মবাদ বা ইন্দ্ৰিয়ই আত্মা : দেহ বিনষ্ট হলে মৃত শরীর আর পূর্বের মতো দেখতে, শুনতে, ঘ্রাণ নিতে, স্পর্শ করতে, স্বাদ গ্রহণ করতে পারে না। তাই কোন কোন চার্বাক এরূপ ধারণা করলেন যে, ইন্দ্রিয়ই আত্মা।
তাঁদের যুক্তি হলো যে, যেহেতু চক্ষু, কর্ণ, জিহ্বা, নাসিকা এবং ত্বক যথাক্রমে দর্শন, ঘ্রাণ, স্বাদ গ্রহণ এবং স্পর্শ করে সুতরাং ইন্দ্রিয়গুলোই আত্মা। দর্শনেন্দ্রিয় রূপ প্রত্যক্ষ করে, শব্দ প্রত্যক্ষ করতে পারে না। একটি ইন্দ্রিয় অন্য ইন্দ্রিয়ের গ্রাহ্য বস্তুকে গ্রহণ করে না। এভাবে নির্বাণ করে গ্রহণ করা কেবল সচেতনের পক্ষেই সম্ভব। কাজেই ইন্দ্রিয়গুলো বিবেকবুদ্ধি সম্মত ও সচেতন। অতএব ইন্দ্রিয়ের অতিরিক্ত সচেতন কোন আত্মার অস্তিত্ব নেই। তাহলে ‘আমি দেখি’ ‘আমি শুনি’, ‘আমি স্পর্শ করি’ ‘আমি ঘ্রাণ নেই’- এসব শব্দ ব্যবহার ও প্রমাণ করে যে, ইন্দ্রিয়ই আত্মা। আত্মা বা আমি এক নয়
ইন্দ্রিয়ভেদে বিভিন্ন। ইন্দ্রিয়ের প্রকৃতি বা স্বরূপ নিয়ে ইন্দ্রিয়াত্মবাদী চার্বাকদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। একদলের বক্তব্য ইন্দ্রিয়গোলকই ইন্দ্ৰিয়। কিন্তু এখানে একটি প্রশ্ন দেখা দিল মৃত দেহে ইন্দ্রিয় গোলকের উপস্থিতি সত্ত্বেও ইন্দ্রিয়ের ক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় না কেন? এ কারণে একদল ইন্দ্রিয়াত্মবাদী সিদ্ধান্ত করলেন চক্ষু, কর্ণ প্রভৃতি বিভিন্ন ইন্দ্রিয়ের পৃথকভাবে রূপ, রস, গন্ধ প্রভৃতি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার যে সহজাত শক্তি তাকেই ইন্দ্রিয় বলে গণ্য করতে হবে। নিদ্রিত বা মূর্ছিত অবস্থায় জীবদেহে বা মৃতদেহে ইন্দ্রিয় গোলকগুলো বর্তমান থাকলেও তাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সহজাত শক্তি স্বভাবতই থাকে না। তাই ইন্দ্রিয়ের ক্রিয়াগুলো প্রত্যক্ষিত হয় না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুশিক্ষিত চার্বাকরা দেহের পৃথক সত্তায় বিশ্বাসী। আত্মা অনন্ত জ্ঞানের অধিকারী এবং আত্মার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়। কিন্তু দেহের বিনাশের সঙ্গে সঙ্গেই আত্মার বিনাশ। আত্মা এক দেহ থেকে অন্য দেহে গমন করে না। যদি করতো তাহলে মানুষ শৈশবের স্মৃতির মতো পূর্বজন্মের স্মৃতিও স্মরণ করতে পারতো। সুতরাং চার্বাকদের মতে ইন্দ্ৰিয়ই আত্মা।

ডিগ্রী অনার্স মাস্টার্স পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে পেতে Whatsapp এ ম্যাসেজ করুন। Whatsapp 01979786079