অথবা, আধুনিক রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের কার্যাবলি আলোচনা কর।
অথবা; আধুনিক রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের কী কী ভূমিকা রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
অথবা, আমলাতন্ত্রের কার্যাবলি ব্যাখ্যা কর।
উত্তরায় ভূমিকা : আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভবের সাথে সাথেই আমলাতন্ত্রের বিকাশ ও কার্যাবলি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি একটি সর্বজনীন ধারণায় পরিণত হয়েছে। বিশ্বের প্রায় সকল সরকারি ব্যবস্থাই হলো কোন না কোন আমলাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার নামান্তর।
আধুনিক রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা : নিম্নে আধুনিক রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা বা কার্যাবলি আলোচনা করা হলো :
১. সরকারি নীতিনির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন : আমলাগণ আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনকানুন এবং বিচারালয়ের সিদ্ধান্তসমূহকে কার্যক্ষেত্রে বলবৎ করেন। আইনকানুন, নীতি, সরকারি সিদ্ধান্ত এবং দৈনন্দিন শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে আমলাগণই একচেটিয়া অধিকার ভোগ করেন। নীতিনির্ধারিত হয়ে গেলে এগুলোকে বাস্তবায়ন করার দায়িত্বও আমলারা
গ্রহণ করে। সুতরাং সরকারি নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন উভয় ক্ষেত্রে আমলাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
২. বিচার সংক্রান্ত কাজ : আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আমলাদের কিছু বিচার সংক্রান্ত কাজও করতে হয়। অনেক রাষ্ট্রেই এখন বিশেষ কিছু বিবাদ বিসম্বাদের মীমাংসা আদালতের পরিবর্তে প্রশাসনিক সংস্থাসমূহের মাধ্যমে সম্পাদন করা হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ ভারতের শিল্প সম্পর্কিত ট্রাইবুনাল, ট্রেডকার্য রেজিস্ট্রিকরণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
৩. আইন বাস্তবায়ন : আমলাতন্ত্র কেবল আইন প্রণয়নে সাহায্য করে না, বরং আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও এদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনকে বলবৎ করার ক্ষেত্রে আদেশ, নির্দেশ ও নিয়মকানুন তৈরির মাধ্যমে আমলাগণ আইনের বাস্তবায়ন করে থাকে।
৪. বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর মধ্যে মধ্যস্থতা : প্রত্যেকটি দেশেই বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠী থাকে। এসব স্বার্থগোষ্ঠীর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক কাজকর্ম নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসা। আর এ অবস্থায় আমলাগণ বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠী ও সরকারের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে স্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
৫. শাসনকার্যে নিরবচ্ছিন্নতা রক্ষা : আধুনিক রাষ্ট্রে সরকার সর্বদা পরিবর্তনশীল। আজ একদল শাসনক্ষমতা গ্রহণ- করে, আবার পরবর্তীতে অন্যদল ক্ষমতায় আসে। এভাবে শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তন হতে থাকে। অথচ এ উত্থানপতনের মধ্যে আমলাগণ শাসনকার্যে নিরবচ্ছিন্নতা রক্ষা করে থাকে।
৬. অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে : অর্থনৈতিক অগ্রগতি ছাড়া একটি দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন। বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কাজের বাস্তবায়ন, বৈদেশিক বাণিজ্য, বিনিময় চুক্তি ইত্যাদি কর্মসূচির মাধ্যমে আমলাতন্ত্র দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে পারে। টাকশাল নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, এমনকি কাজের বিনিময়ে খাদ্য বিতরণ প্রতিটি অর্থনৈতিক কর্মসূচিতে আমলাতন্ত্রের অবদান থাকে।
৭. পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে : পররাষ্ট্রনীতির নিয়ন্ত্রক হিসেবেও আমলাতন্ত্রের ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, নীতিনির্ধারণ, চুক্তিসম্পাদন এমনকি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ ও সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৮. আইন প্রণয়ন : আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলি অত্যন্ত জটিল। আর এ জটিল বিষয়াদি আইনে বিধিবদ্ধ করা সম্ভব হয় না। তাই প্রত্যেক দেশেই আইনসভা শাসন বিভাগের উপর আইন প্রণয়নের ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বা
ধ্য হচ্ছে। আর এ অবস্থায় আমলাগণ অনেকাংশেই আইন প্রণয়ন করে থাকেন।
৯. দৈনন্দিন কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে : সরকারের দৈনন্দিন কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা অনেক। জন্ম-মৃত্যুর হিসাব রাখা থেকে শুরু করে বহির্বিশ্বের পরিস্থিতি বিবেচনা পর্যন্ত সকল কাজেই আমলাতন্ত্রের ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়।
১০. সংবাদ ও তথ্য সরবরাহ : সরকারের গৃহীত নীতি ও কার্যাবলি সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাদি সরবরাহের জন্য সংবাদপত্র, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, জনসাধারণ সর্বদা আমলাতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল থাকে। সুতরাং সংবাদ ও তথ্যাদি সরবরাহে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা অপরিসীম।
১১. সরকার ও জনগণের মধ্যে সংযোগ সাধন : গণতান্ত্রিক দেশসমূহে আমলাগণ সরকারি কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জনগণকে অভিহিত করে থাকে। জনগণও প্রয়োজনমতো আমলাদেরকে তাদের সমস্যা সম্পর্কে অবহিত করে এবং সেসব সমস্যার সমাধান পেতে চায়। এভাবে আমলারা সরকার ও জনগণের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সরকারি নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন, আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, জনসংযোগ সাধন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রভৃতি কল্যাণমূলক কাজ আমলারা করে থাকে। এ প্রসঙ্গে Joseph-La-Palambara তাঁর ‘Bureaucracy and Political Development’ , “Bureaucracy is an important independent variable that greatly influences any kind of transformation in developing countries be it social, economic and political.”

ডিগ্রী অনার্স মাস্টার্স পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে পেতে Whatsapp এ ম্যাসেজ করুন। Whatsapp 01979786079