অথবা, আধুনিকীকরণ তত্ত্বের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তির সাথে সাথে আধুনিকীকরণ তত্ত্ব প্রসার লাভ করে। বর্তমানে সামাজিক চিন্তার ক্ষেত্রে আধুনিকীকরণ তত্ত্ব গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। সামাজিক বিষয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে আধুনিকীকরণের প্রভাব স্পষ্ট। মূলত আধুনিকীকরণ তত্ত্ব সম্পর্কে জানতে হলে সর্বপ্রথম আধুনিকীকরণ কি তথা আধুনিকীকরণ বলতে প্রধানত কি বুঝায় সে সম্পর্কে সার্বিক ধারণা থাকতে হবে।
আধুনিকীকরণ তত্ত্বের পটভূমি : উন্নয়ন এবং আধুনিকীকরণ গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। উন্নয়ন ছাড়া আধুনিকীকরণ সম্ভব নয়। অন্যদিকে, উন্নয়ন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো শিল্পক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। উন্নয়নের ধারায় প্রবাহিত হওয়ার জন্য তৃতীয় বিশ্বে শিল্পের বিকাশ ঘটানো হয়। আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য মূলত তৃতীয় বিশ্বে শিল্পের বিকাশ ঘটানো হয়। আধুনিকীকরণের সাথে শিল্পের বিকাশ যেমন সম্পর্কযুক্ত তেমনি নগরায়নের বিষয় এর সাথে সংশ্লিষ্ট। শিল্পের উন্নয়ন ছাড়া আধুনিক সভ্যতার বিকাশ সম্ভব নয়। তাই শিল্প আধুনিক সভ্যতার অন্যতম সহায়ক উপাদান। আবার শিল্পের বিকাশকে আধুনিকতা প্রাধান্য দেয়। কেননা কোন সমাজ বা রাষ্ট্র শিল্পক্ষেত্রে যত উন্নতি লাভ করবে সে সমাজ বা রাষ্ট্র তত আধুনিক হবে। এভাবে দেখা যায়, তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নের জন্য শিল্পের উন্নয়ন প্রয়োজন, শিল্পায়ন স্বাভাবিকভাবেই নগরায়ন ঘটায়। প্রাচীন ও মধ্যযুগেও শিল্পায়ন ও নগরায়ন ঘটেছিল। কিন্তু বর্তমানের শিল্পায়ন ও নগরায়নের ক্ষেত্রে আধুনিকতার পার্থক্য স্পষ্ট। প্রাচীন ও মধ্যযুগের নগরায়ন ও শিল্পায়নে আধুনিকতার সংস্পর্শ ছিল না।
আধুনিকীকরণ বনাম মার্কসবাদ : আধুনিকীকরণ তত্ত্বকে মার্কসবাদে স্বীকার করা হয় নি। Durkheim ও Max Weber সমাজবিজ্ঞানে আধুনিক প্রত্যয় সৃষ্টি করেছেন। আধুনিক যুগে দুটি সমাজের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। যথা :
১. আধুনিক সমাজ এবং
২. গতানুগতিক সমাজ।
আধুনিকীকরণ তত্ত্ব পাশ্চাত্য সমাজবিজ্ঞানীরা বিশেষভাবে গ্রহণ করেছেন। পাশ্চাত্য সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, তারা যে উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছেন সেখানে মার্কসবাদের প্রভাব রয়েছে। উন্নয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে যে বিতর্ক রয়েছে ‘সেখানে বলা হয় জ্ঞানী ব্যক্তিরা উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব না হলে তারা বুঝে নেন যে, মার্কসবাদ ধনী ও দরিদ্রদের সমস্যার সমাধান করেন। উন্নয়নের ক্ষেত্রে যারা মার্কসবাদকে সমর্থন জানান তারা পরবর্তীতে আরাম আয়েশে থাকার জন্য মার্কসবাদকে সমর্থন জানান।
আধুনিকীকরণের বিচার বিশ্লেষণ : Auguste Comte, Durkheim, Max Weber, Tonny Barhet প্রমুখ নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজকে বিভক্ত করেছেন। গতানুগতিক ও আধুনিক সমাজের মধ্যে কতকগুলো পার্থক্য বিদ্যমান । যথা ঃ
i. Value dominent : সমুদ্রে যাত্রা করলে তাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হতো, এটি পরিবার থেকে এসেছে।
ii. Kinship : পরিবার থেকে Kinship এসেছে। গোত্র জীবন থেকে Kinship এর উদ্ভবকে অনেকাংশে সমর্থন করা যায় । অধিকাংশ অনুন্নত দেশে Kinship Pattern গুরুত্ব পায়।
iii. Emotional ties : গতানুগতিক জীবনধারায় আবেগের উদ্ভব ঘটে। মানুষের উগ্রতা আবেগ থেকে আসে।
iv. Fatalism and superstition : তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এগুলো স্পষ্ট। সাম্প্রতিককালে সমাজবিজ্ঞানে এর উদ্ভব ঘটেছে। প্রতি দশ বছর পর পর একটি পরিবর্তন আসবে। সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের …বিষ্কার করেছেন বলে Parsons দাবি করেন। Modern system এ এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, যা পূর্বে ঘটে নি।
Level of innovation এর মধ্য দিয়ে Hegel আধুনিক ও গতানুগতিক জীবনের পার্থক্য আলোচনা করেছেন। একে আধুনিক সভ্যতার প্রধান দিক হিসেবে
আলোচনা করেছেন। এটি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য অনুকরণযোগ্য। Rostow মনে করে, আধুনিকীকরণ একটি পর্যায়ক্রমিক বিষয়। তিনি Non-Communist Manifesto তে
সমাজকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন । যথা :
i. Traditional Society,
ii. Modern Society.
এছাড়াও সমাজের উন্নয়ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাঁচটি স্তর অতিক্রমের মধ্য দিয়ে সাধিত হয়। যথা :
i.The traditional society,
ii. The pre-conditions for take off,
iv. The drive to maturity,
iii.The take off,
v.The age of high mass consumption. আধুনিকীকরণ তত্ত্বের পটভূমি আলোচনা কর।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, পাশ্চাত্য সমাজবিজ্ঞানীরা যে আধুনিকীকরণ তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন
সেখানে পাশ্চাত্য সমাজের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের আধুনিকীকরণ পাশ্চাত্য অনুকরণেই সম্ভব বলে তাত্ত্বিকরা মনে করেন । আধুনিকীকরণ তত্ত্ব উন্নত এবং অনুন্নত সমাজকে বিভিন্ন উপাদানের ভিত্তিতে পার্থক্য করেছে।

ডিগ্রী অনার্স মাস্টার্স পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে পেতে Whatsapp এ ম্যাসেজ করুন। Whatsapp 01979786079