General Knowledge

আগন্তুক গুণ বলতে জৈনরা কী বুঝিয়েছেন?

অথবা, জৈন দর্শনে আগন্তুক গুণ কী?
অথবা, আগন্তুক গুণ সম্পর্কে জৈনদের ধারণা কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
সাধারণত ধর্ম বলতে গুণকে বুঝায় এবং ধর্মী বলতে গুণের অধিকারীকে বুঝায়। সাধারণ অর্থে এই ধর্মীকেই দ্রব্য বলা হয়। জৈনগণ দ্রব্যকে এ সাধারণ অর্থেই গ্রহণ করেছেন। তাদের মতে, দ্রব্য গুণ ও পর্যায়বিশিষ্ট। গুণ ছাড়া যেমনি দ্রব্যকে উপলব্ধি করা যায় না, তেমনি অর্থাৎ দ্রব্যকে আশ্রয় করেই গুণগুলো অবস্থান করে। দ্রব্যের
গুণগুলো দুই রকমের বলে জৈনরা মনে করেন। যথা : স্বাভাবিক গুণ ও আগন্তুক গুণ। নিম্নে প্রশ্নানুসারে আগন্তুক গুণের স্বরূপ আলোচনা করা হলো।
আগন্তুক গুণ : জৈনদের মতে, যেসব গুণ বস্তুর স্বভাবধর্ম প্রকাশ করে না এবং সব সময় দ্রব্যের মধ্যে অবস্থান করে না সেসব গুণকে আগন্তুক গুণ বলা হয়। এগুলো কখনো কখনো দ্রব্যে উপস্থিত থাকে আবার কখনো উপস্থিত থাকে না। যেমন— কামনা-বাসনা, সুখ-দুঃখ, হিংসা-দ্বেষ প্রভৃতি আত্মার আগন্তুক গুণ বা অনিত্য ধর্ম। ।
আগন্তুক গুণগুলো পরিবর্তনশীল : জৈনরা বলেন, আমরা যেসব গুণকে আগন্তুক গুণ বলি সেগুলো সর্বদা একইরূপে বস্তুর মধ্যে অবস্থান করে না। এগুলো নিয়ত পরিবর্তনশীল। অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে আগন্তুক গুণগুলোরও পরিবর্তন ঘটে।
আগন্তুক গুণ প্রকৃত গুণ নয় : জৈনদের মতে, আগন্তুক গুণের সাথে বস্তুর স্বরূপের কোন সম্পর্ক নেই। আগন্তুক গুণের বিশেষ বিশেষ অবস্থার জন্য বস্তুর স্বরূপে কোন পার্থক্য ঘটে না বা আগন্তুক গুণের পরিবর্তন ঘটে না। তাই জৈনরা আগন্তুক গুণকে প্রকৃত গুণ বলে মনে করেন না।
আগন্তুক গুণ একেকটি পর্যায় : আগন্তুক গুণগুলো সবসময় বস্তুতে একইভাবে অবস্থান করে না। এগুলো কখনো বস্তুতে উপস্থিত থাকে আবার কখনো উপস্থিত থাকে না। আর যখন উপস্থিত থাকে তখন তা একই মাত্রায়ও থাকে না। এজন্য জৈনরা আগন্তুক গুণকে পর্যায় বলেছেন।
আগন্তুক গুণের বিচারে দ্রব্য অনিত্য : জৈনগণ বলেন, বিভিন্ন গুণের সমষ্টিই জগৎ। দ্রব্যই জগতের মূল উপাদান। তাদের মতে, দ্রব্যের স্বাভাবিক গুণের দিক থেকে বিচার করলে দ্রব্য নিত্য বা অপরিণামী, আর পর্যায়ের বা আগন্তুক গুণের দিক থেকে বিচার করলে এই দ্রব্য অনিত্য বা পরিণামী।
আগন্তুক গুনের বিচারে দ্রব্যের উৎপত্তি আছে : জৈনরা মনে করেন, আগন্তুক গুণ যেহেতু সমসময় দ্রব্যে উপস্থিত থাকে না, সেহেতু এগুলো বস্তুর প্রকৃত সত্তার সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। যখনই কোন সত্তার উদ্ভব হয় তখনই এ গুণগুলো অবস্থার প্রেক্ষিতে দ্রব্যে উপস্থিত হয় আবার অবস্থার প্রেক্ষিতেই দ্রব্য থেকে বিলুপ্ত হয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে জৈনরা বলেন, আগন্তুক গুণের দিক থেকে দ্রব্যের উৎপত্তি আছে।
আগন্তুক গুণের বিচারে দ্রব্য বিনাশশীল : জৈনরা মনে করেন, আগন্তুক গুণের দিক থেকে দ্রব্যের যেহেতু উৎপত্তি আছে, সেহেতু তা অবশ্যই বিনাশশীল। কারণ যার উৎপত্তি আছে তার তো বিনাশ হবে। জৈনরা বলেন, আগন্তুক গুণ দ্রব্যের মধ্যে আসা-যাওয়ার পর্যায়ে থাকে। অর্থাৎ কখনো উপস্থিত থাকে আবার কখনো অনুপস্থিত থাকে। দ্রব্যে এসব
গুণের একেবারে স্থায়ী অনুপস্থিতিই দ্রব্যের বিনাশকে নির্দেশ করে।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, জৈনরা দ্রব্যের গুণকে দুই ভাগে ভাগ করে আগন্তুক গুণের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের ব্যাখ্যায় দেখা যায়, বস্তুর অস্থায়ী গুণগুলোকেই তারা আগন্তুক গুণ
বলেছেন। তাদের এ মতবাদের বিরুদ্ধে পরবর্তীকালে অনেক আপত্তি উত্থাপিত হলেও দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের মতের গুরুত্ব যে অপরিসীম সেকথা নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!