আওয়ামী লীগের ছয়দফা ও যুক্তফ্রন্টের একুশ দফার তুলনামূলক আলোচনা কর।
অথবা, ছয়দফা ও একুশ দফার তুলনামূলক আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট যে একুশ দফার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল তাতে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর ছয়দফা দাবি ছিল পূর্ব বাংলার জনগোষ্ঠীকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ
ঔপনিবেশিক শাসন শোষণ নিপীড়ন থেকে রক্ষা করতে বাঙালি জননেতা শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ছয়দফা দাবি উত্থাপন করেন। ছয়দফা ও একুশ দফার তুলনামূলক আলোচনা : নিচে ছয়দফা ও একুশ দফার তুলনামূলক আলোচনা করা হলো :
১. যুক্তফ্রন্টের একুশ দফা কর্মসূচি ভাষা আন্দোলন তথা ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপের প্রেক্ষিতে
গৃহীত হয়। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের ছয়দফা আইয়ুব খানের শোষণ নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে গৃহীত হয়।
২. ছয়দফা ও একুশ দফা উভয় ক্ষেত্রেই স্বায়ত্তশাসনের দাবির প্রেক্ষাপট হিসেবে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবকে গ্রহণ করা হয়। একুশ দফায় কেন্দ্রের হাতেপররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও মুদ্রা এ তিনটি বিষয় রেখে বাকিসব প্রদেশের হাতে ছেড়ে দেয়ার দাবি দেয়া হয়। কিন্তু ছয়দফায় দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি বাদে অন্যান্য সকল বিষয় প্রদেশের হাতে ছেড়ে দেয়ার কথা বলা হয়।
৩. যুক্তফ্রন্টের একুশ দফার মধ্যে ভাষার দাবি থেকে শুরু করে কৃষক, শ্রমিক জনতার দাবি অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু ছয়দফা ছিল মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণির দাবি যদিও এটাতে অন্যান্য শ্রেণি সমর্থন যুগিয়েছিল।
৪. ছয়দফার ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসনের দাবিটি ছিল অধিক কার্যকরী। অন্যদিকে, একুশ দফায় প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিটি অতটা জোরালো ছিল না।
৫. একুশ দফায় পূর্ব পাকিস্তানকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার কথা বলা হয়, কিন্তু এখানে আধাসামরিক বাহিনী গঠনের কথা বলা হয়নি। অপরপক্ষে, প্রদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ছয়দফায় আধাসামরিক বাহিনী গঠনের
ব্যাপারে বলা হয়েছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, একুশ দফা ও ছয়দফার মধ্যে কিছুটা বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান থাকলেও মূলত শেখ মুজিবুর রহমান একুশ দফার দাবিগুলোকে চেতনায় ধারণ করেই
ছয়দাবি উত্থাপন করেছিলেন।