General Knowledge

আইয়ুব খানের পতনের কারণ আলোচনা কর।

অথবা, ধর্মে রাজনীতির ব্যবহার সম্পর্কে যা জান লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির জন্ম যদিও ধর্মীয় অনুভূতিকে লালনের মধ্য দিয়ে ঘটেছিল, তথাপি স্বাধীনোত্তর জনগণের মনে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ও আশাআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটেনি। একদিকে ধর্মীয় চিন্তাচেতনার কারণে সাধারণ জনগণ ও অন্যান্য সংখ্যালঘুরা তাদের স্বাধীন মত যেমন প্রকাশ করতে পারে না তেমনি তারা ধর্মীয় সংস্কৃতি পালনের ক্ষেত্রেও নানারকম অপ্রত্যাশিত বাধার সম্মুখীন হয়। কারণ রাষ্ট্রটি ইসলামি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। জেনারেল আইয়ুব খান এক ধর্ম, এক ভাষা, এক সংস্কৃতি ও অভিন্ন ঐতিহ্য গড়ে তোলার জন্য ধর্ম ও সংস্কৃতির উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ শুরু করে।
ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার : পাকিস্তানের শতকরা ৯০ ভাগ লোক ইসলাম ধর্মাবলম্বী। স্বভাবতই সেখানে মানুষের ভিতর ধর্মীয় অনুভূতি অতি প্রবল মাত্রায় কাজ করে। এ ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণকারী জেনারেল আইয়ুব খান। আইয়ুব খান তার ক্ষমতাকে জনগণের নিকট বৈধ করতে তিনি ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগাতে তৎপর হন। আইয়ুব খান শিক্ষা কমিশন ও বাংলা একাডেমিকে বাংলার পরিবর্তে রোমান হরফ প্রবর্তন করার নির্দেশ করেন। বাংলা ভাষার সংস্কার এবং উর্দুকে বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রভৃতি বাস্তবায়নের
উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বাংলার বিভিন্ন কবিতা ও নৈতিক বাণীকে ইসলামি রূপ দেয়া হয়। যেমন- সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, ‘সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি’, ‘এটিকে ইসলামি রূপে ফজরে উঠিয়া আমি দিলে দিলে বলি সারাদিন আমি যেন নেক হয়ে চলি’। ১৯৬৫ সালে কাশ্মিরকে নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের সাথে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ সময় সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টিতে পাকিস্তান সরকার ও গণমাধ্যম প্রচারণা চালায়। পাকিস্তান ইসলামকে শক্তি ও কুরআন-সুন্নাহকে রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিজীবনের প্রভৃতি ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করে। সামরিক শাসকগণ হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক সুবিধা লাভে তৎপর হয়। তারা বাংলাকে সংস্কৃতি ভাষা বলে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে রেডিও, টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য আইয়ুব খান ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আইয়ুব খান অবৈধভাবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করেন। আইয়ুব খানের যেহেতু কোনো জনসমর্থন ছিল। সেহেতু তিনি ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেন এবং সাধারণ মানুষের সহানুভূতি লাভে তৎপর হয়। প্রত্যেক সামরিক শাসকই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গিয়ে ধর্মকে ব্যবহার করেন। পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ধর্মের অধিক ব্যবহারে দেশটি যেমন একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে তেমনি একটি জঙ্গিরাষ্ট্রে আত্মপ্রকাশ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!