
ডিগ্রী অনার্স মাস্টার্স পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে পেতে Whatsapp এ ম্যাসেজ করুন। Whatsapp 01979786079
আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখল ও শাসনের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা কর।
admin
- 0
অথবা, সংক্ষেপে আইয়ুব খানের শাসনের বৈশিষ্ট্য লিখ।
অথবা, আইয়ুব খানের শাসনের প্রকৃতি বর্ণনা কর।
অথবা, আইয়ুব খান কিভাবে পাকিস্তানে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেন? বর্ণনা কর।
অথবা, আইয়ুব খানের ক্ষমতা গ্রহণ প্রক্রিয়া বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্র আবার দুটি পৃথক ভূখণ্ডে বিভক্ত ছিল। একদিকে পূর্ব বাংলা আর অন্যপাশে পশ্চিম পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগণ পূর্ব পাকিস্তানি জনগণের উপর নির্যাতন ও অত্যাচার চালায়। তেমনি একজন অত্যাচারী শাসক ছিলেন আইয়ুব খান। ১৯৫৮ সালে ক্ষমতা দখল ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আন্দোলনের মুখে ১৯৬৯ সালে ২৫ মার্চ আইয়ুব খান ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়।
আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখল : পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে গণতন্ত্রকে হত্যা করে ১৯৫৮ সালে ইস্কান্দার মির্জা সামরিক শাসন জারি করে। ৭ অক্টোবর তিনি আইয়ুব খানকে সেনাবাহিনীর প্রধান করেন। ইস্কান্দার মির্জা আইয়ুব খানের দুরভিসন্ধি সম্বন্ধে আন্দাজ করতে সক্ষম হয়। তাই যখন আইয়ুব খান পূর্ব পাকিস্তান সফরে ছিল তখন ইস্কান্দার মির্জা লে. জে. মুসাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করেন। আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জার লক্ষ্য বাস্তবায়নের আগেই চারজন জেনারেলের মাধ্যমে পদত্যাগ পত্র আদায় করেন। পরে তাকে বিমানযোগে লন্ডনে পাঠান ও নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে ক্ষমতা দখল করেন।
আইয়ুব শাসনের বৈশিষ্ট্য : আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জার হাত থেকে ক্ষমতা দখল করে ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর। তিনি ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। আইয়ুব খানের ১১ বছর শাসনামলে পাকিস্তান শাসনামলে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। নিচে আইয়ুব খানের শাসনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :
১. ১৯৫৬ সালের সংবিধান স্থগিত : পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ নয় বছর লাগে সংবিধান প্রণয়ন করতে। ১৯৫৬ সালে সংবিধান প্রণয়ন হলে প্রথমে ইস্কান্দার মির্জা ও পরে আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে গণতন্ত্র বিনষ্ট করে। আইয়ুব এক আদেশ বলে ১৯৫৬ সালের সংবিধান স্থগিত করেন।
২. প্রাদেশিক সরকারের বিলুপ্তি : আইয়ুব খান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে থাকেন। তিনি এক অধ্যাদেশে পাকিস্তানের প্রদেশ বিলুপ্তি ঘোষণা করে সমগ্র পাকিস্তানকে কেন্দ্র থেকে শাসন করার পদ্ধতি অবলম্বন করেন। আইয়ুব শাসন আমলের প্রাদেশিক সরকারের বিলুপ্তি ছিল অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
৩. রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণ : আইয়ুব খানের সামরিক শাসন আমলে সকল প্রকার রাজনৈতিক দলের বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়। এ সময় রাজনৈতিক দলের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এভাবে আইয়ুব খান জনগণের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেয়, যা আইয়ুব শাসনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল।
৪. সংবিধান প্রণয়ন : আইয়ুব খান ১৯৫৬ সালের সংবিধান বাতিল ঘোষণা করে ১৯৬২ সালে একটি সংবিধান প্রণয়ন করেন। এই সংবিধানের মাধ্যমে পাকিস্তানকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়।
৫. রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা : আইয়ুব খান ১৯৬২ সালে সংবিধান প্রণয়ন করেন। এই সংবিধানের মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতি বাতিল করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু করেন। এতে মূল ক্ষমতা থাকে রাষ্ট্রপতির হাতে, যা আইয়ুব শাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল।
৬. একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা : আইয়ুব শাসনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু করা। যেহেতু আইয়ুব খান সকল দল নিষিদ্ধ করেন তাই তার বিরোধী কেউ না থাকায় আইয়ুব খান একনায়
কতন্ত্র কায়েম করেন।
৭. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব : আইয়ুব শাসনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব। আইয়ুব খান ১৯৬২ সালের সংবিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করেন। কোনো আইন বা বিধিবিধানকে অসাংবিধানিক ঘোষণার ক্ষমতা বিচার বিভাগের ছিল না। ফলে বিচার বিভাগের তেমন ক্ষমতা থাকে না।
৮. মৌলিক গণতন্ত্র : আইয়ুব সরকার ১৯৫৯ সালের ২৬ অক্টোবর মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ জারি করে। এর দ্বারা ৪ স্তর বিশিষ্ট পিরামিড আকৃতির একটি কাঠামো সৃষ্টি করা হয় । স্তরগুলো :
১. বিভাগীয় কাউন্সিল
↓
২. জেলা কাউন্সিল
↓
৩. থানা কাউন্সিল
↓
৪. ইউনিয়ন কাউন্সিল
আইয়ুবের এই মৌলিক গণতন্ত্র বুনিয়াদি গণতন্ত্র নামেও পরিচিত।
৯. মিডিয়া নিষিদ্ধকরণ : আইয়ুব খান পূর্ব পাকিস্তানের বহুল পরিচিত ‘ইত্তেফাক’ পত্রিকা বন্ধ করে। এছাড়া রেডিও ও টেলিভিশন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য, সংগীত ও কবিতা নিষিদ্ধ করেন। এভাবে আইয়ুব খান জনগণকে প্রচারমাধ্যম ও বিনোদনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আইয়ুব খানের প্রায় ১১ বছরের শাসন ছিল অত্যন্ত ঘৃণ্য। যা ছিল মূলত অত্যাচার, নির্যাতন ও বন্দুকের মুখে নাগরিক অধিকার বিবর্জিত শাসন আমল। ফলে জনগণ তার বিরুদ্ধে মূলত পূর্ব পাকিস্তানে গণঅভ্যুত্থান আন্দোলন গড়ে তোলে, এতে আইয়ুব সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ফলে আইয়ুব শাসনামলের অবসান
ঘটে।