General Knowledge

আইনগত কাঠামো আদেশের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।

অথবা, ইয়াহিয়া খানের আইনগত কাঠামো আদেশের ধরন লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শাসক আইয়ুব খান ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলেও সামরিক শাসনের ধারাবাহিকতায় ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন। ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানকল্পে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ১৯৭০ সালে আইনগত কাঠামো আদেশ জারি করেন। ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণের পর ২৬ মার্চ বেতার ভাষণে তিনি স্পষ্ট করেন, তিনি জনগণের দাবি অর্থাৎ গণতন্ত্রের দাবির বিরুদ্ধে নয়। তিনি সমগ্র প্রশাসন ব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে গড়ে তোলা, আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে মত দেন। নিচে ইয়াহিয়া খানের আইনগত কাঠামোর বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :
আইনগত কাঠামো আদেশ (Legal framework order) : নির্বাচনের লক্ষ্যে ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের ৩০ মার্চ কতিপয় শাসনতান্ত্রিক পদক্ষেপসহ আইনগত কাঠামো আদেশ জারি করেন। আইনগত কাঠামো আদেশে নির্বাচন, আসন সংখ্যা ও জাতীয় পরিষদের গঠন সংক্রান্ত বিধানসমূহ ছিল নিম্নরূপ :
ক. সাধারণ নির্বাচন সংক্রান্ত বিধান :
ক. সার্বজনীন ভোটাধিকার,
খ. এক ব্যক্তি, এক ভোট নীতি,
গ. প্রত্যেক প্রদেশ বা অঙ্গরাজ্যের জন্য জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন সংখ্যা বণ্টন ।
খ. জাতীয় পরিষদের
সংক্রান্ত বিধান :
ক. জাতীয় পরিষদের আসন সংখ্যা ৩১৩ নির্ধারণ,
খ. এলাকাভিত্তিক সাধারণ আসন সংখ্যা ৩০০ এবং মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ১৩ নির্ধারণ,
গ. জনসংখ্যাভিত্তিক বিভিন্ন প্রদেশ বা অঙ্গরাজ্যের আসনসংখ্যা নির্ধারণ হবে।
গ. সংবিধান সংক্রান্ত বিধান :
১. পাকিস্তানের সংবিধান ইসলামের আদর্শের ভিত্তিতে রচিত হবে।
২. সংবিধানকে অবশ্যই গণতন্ত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে এবং তাতে প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে স্বাধীন ও সাধারণ নির্বাচনের মতো গণতন্ত্রের মৌল উপাদানগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
৩. সংবিধানকে অবশ্যই পাকিস্তানের স্বাধীনতা, আঞ্চলিক সংহতি ও জাতীয় ঐক্য রক্ষা করতে হবে।
৪. সংবিধানকে সত্যিকার অর্থে যুক্তরাষ্ট্রীয় হতে হবে, যাতে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকারসমূহের মধ্যে আইন বিষয়ক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতাসহ অন্যান্য ক্ষমতা এমনভাবে বিভক্ত থাকবে যেন
প্রদেশগুলোর সর্বাধিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত হয়।
৫. নির্বাচিত প্রতিনিধিবৃন্দ কর্তৃক সংবিধান প্রণয়নের নির্বাচিত সময়সীমা ১২০ দিন ধার্য নির্ধারিত সময়সীমায় সংবিধান প্রণয়নে ব্যর্থ হলে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেয়া এবং নতুন সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করা।

৬. জাতীয় পরিষদের প্রতিনিধিবৃন্দ কর্তৃক গৃহীত সংবিধান রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত হওয়া আবশ্যক। আইনগত কাঠামো আদেশ রাজনৈতিক মহলে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সমালোচিত হতে থাকে। যেমন- ১ এপ্রিল (১৯৭০) ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তান অওয়ামী লীগের ওয়াকিং কমিটির জরুরি বৈঠকে জনগণের গণতান্ত্রিক দাবিদাওয়া ও আশা- আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্য রক্ষাকল্পে আইনগত কাঠামোকে যথাযথভাবে সংশোধনের আহবান জানানো হয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ আইনগত কাঠামোর ২৫ এবং ২৭ নং ধারার তীব্র সমালোচনা করে। কারণ তা ছিল গণতান্ত্রিক নীতিমালার বিরোধী। ২৫নং ধারায় বলা হয় জাতীয় পরিষদ কর্তৃক গৃহীত বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করতে হবে, রাষ্ট্রপতি অস্বীকৃতি জানালে জাতীয় পরিষদ ভেঙে যাবে। ২৭নং আদেশে বলা হয় এ আদেশের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ বা প্রশ্ন দেখা দিলে রাষ্ট্রপতি সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন। relar & আইনগত কাঠামো আদেশকে ন্যাপ (ভাসানী) সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি জাতীয় পরিষদে শ্রমিক ও কৃষকদের জন্য আসন সংরক্ষণের দাবি জানান। ২৯ ন্যাপ (মোজাফফর) আইনগত কাঠামোর ২০, ২৫ ও ২৭ নং ধারা বাতিলের দাবি জানান।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জেনারেল ইয়াহিয়া খান কর্তৃক প্রণীত আইনগত কাঠামো আদেশ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্নভাবে সমালোচনা করলেও ১৯৭০ এর নির্বাচনে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই অংশগ্রহণ করে। মূলত আইনগত কাঠামো ধারণাটি ছিল তৎকালীন সমস্যার প্রেক্ষিতে একটি গ্রহণযোগ্য বিষয়, যার গ্রহণযোগ্যতার বাস্তব প্রয়োগ দেখা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!